Kailash Vijayvargiya

Kailash Vijayvargiya: আর নয় বাংলা, নেতৃত্ব চাইলেও বাংলায় আসতে নারাজ মুকুল-কাঁটায় বিদ্ধ কৈলাস

সম্প্রতি রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠকে যোগ দিতে আসনেনি কৈলাস। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অল্প সময়ের জন্য যোগ দিলেও কোনও কথা বলেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২১ ১১:৪৪
Share:

ফাইল চিত্র।

দলকে ‘বাংলা বিজয়’ উপহার দিতে পারেননি কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এখন বাংলার দায়িত্ব পালন করতেই নাকি ভয় পাচ্ছেন! রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় নেতারা বললেও বাংলার পর্যবেক্ষকের ভূমিকা থেকে এ বার নিজেই অব্যহতি চাইছেন কৈলাস। এর ফলে খুব তাড়াতাড়ি না হলেও বাংলায় নতুন পর্যবেক্ষক নিয়োগ হতে পারে। আবার বাংলার দুই সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন এবং অমিত মালব্যের মধ্যে কোনও এক জনকে দেওয়া হতে পারে দায়িত্ব।

Advertisement

সম্প্রতি রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠকে যোগ দিতে আসনেনি কৈলাস। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অল্প সময়ের জন্য যোগ দিলেও কোনও কথাই বলেননি। বৈঠকে যত ক্ষণ সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা ছিলেন তত ক্ষণই নাকি হাজির ছিলেন কৈলাস। এ সবের পরে গেরুয়া শিবিরের রাজ্য নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, ভয়ে বাংলায় আসতে চাইছেন না কৈলাস।

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে পরেই ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বৈঠক করতে এসেছিলেন নড্ডা। সেই সময়েই ছিল কৈলাসের শেষ দলীয় কর্মসূচিতে বাংলা সফর। এর পরে আর তিনি আসেননি। ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি নজরে রাখতে এসেছিলেন পঞ্জাবের নেতা তরুণ চুঘ। কিন্তু কৈলাসকে আর সে ভাবে সামনে আসতে দেখা যায়নি। রাজ্য নেতারাও চাননি কৈলাস আসুন। কারণ, দলের আশানুরূপ ফল না হওয়ার জন্য বিজেপি-র একটা বড় অংশই কৈলাসকে দায়ী করে। সেই অংশের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে ভেবেই কৈলাসের বাংলা সফর চাননি রাজ্য নেতারা। এখন আর কৈলাসই আসতে চাইছেন না।

Advertisement

রাজ্যে পর্যবেক্ষক বদলের দাবি উঠতে শুরু করে ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই। একটা সময় জানা গিয়েছিল, কৈলাসের মতোই আর এক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র যাদবকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। কিন্তু রাজ্যে যে হেতু সামনে বড় কোনও নির্বাচন নেই তাই এখনই ভূপেন্দ্রর মতো কোনও নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা কম। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনকে বিজেপি এতটাই গুরুত্ব দেয় যে দু’জন সহ-পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছিল। তাঁদের মধ্যে মেননও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আর মালব্য দলের আইটি সেলের প্রধান। অমিত শাহ-ঘনিষ্ঠ ওই নেতা এই প্রথম কোনও রাজ্যের দায়িত্বে আসেন। মালব্য এখনও দায়িত্বে থাকলেও তাঁকে তুলে নিতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, এখন কৈলাসের অনুপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে আপাতত সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখবেন শিবপ্রকাশ। দলের সর্বভারতীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ অনেক দিন ধরেই বাংলার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।

রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না হওয়ায় জেলা, এমনকি, রাজ্যস্তরের অনেক নেতার মধ্যেও কৈলাসকে নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কৈলাস রাজ্যে আসতে চাইছেন না।’’ ক্ষোভ যে রয়েছে তা আরও বেশি করে সামনে এসে যায় সম্প্রতি কলকাতায় কৈলাসের নামে ‘টিএমসি সেটিং মাস্টার’, ‘গো ব্যাক’ বলে পোস্টার পড়ায়। তার ঠিক পরে পরেই রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠকে দলও চায়নি কৈলাস কলকাতায় আসুন।

তবে এই পোস্টার-কাণ্ডের আগেই রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায় নেট মাধ্যমে কৈলাসকে আক্রমণ করেন। তবে একা কৈলাস নন, কেন্দ্রীয় নেতা মেনন ও শিবপ্রকাশকেও আক্রমণ করেন তথাগত। বাদ যাননি দিলীপ ঘোষও। তবে কৈলাসকে নিয়ে ক্ষোভ আরও বেড়েছে মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে। উত্তরপ্রদেশের বর্তমান মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ একটা সময়ে রাজ্য বিজেপি-র পর্যবেক্ষক ছিলেন। তিনি অন্য দল থেকে নেতা নেওয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। মুকুলকে নিয়ে ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ স্লোগান তুলেছিলেন এই সিদ্ধার্থ। পরে কৈলাস বাংলার দায়িত্ব পেয়ে নীতি বদলে দেন। তাঁর আমলেই মুকুলকে দিয়ে শুরু হয় অন্য দলের নেতা নেওয়া। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে যা বড় আকার নেয়।

এটা সর্বজনবিদিত যে, দিলীপ-মুকুল ‌দ্বৈরথে কৈলাস বরাবর মুকুলের পক্ষ নিয়েছেন। লোকসভা থেকে বিধানসভা নির্বাচন— প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুকুলের পরামর্শ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর কাছে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারপর্বেও মুকুলকে পাশে নিয়েই কাজ করেছেন তিনি। তা নিয়ে দিলীপ-শিবিরের সমালোচনার মুখেও পড়েছেন তিনি। তবে তখন সে সবকে পাত্তাই দেননি কৈলাস। এখন পরিস্থিতি অন্য। রাজ্য বিজেপি-র দিলীপ-ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, ‘‘মুকুল রায়কে নিয়ে অনেক নাচাচাচি করেছেন কৈলাস’জি। কারও কথাই শুনতেন না একটা সময়ে। এখন মকুল মুখ পোড়ানোর পরে তিনি আর তাই মুখ দেখাতেই চাইছেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement