JP Nadda

জেলে ভরব, হুঙ্কার নড্ডার

কলকাতায় বুধবার গভীর রাতে পৌঁছেছিলেন নড্ডা। রাজারহাটের হোটেলে বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্য বিজেপির তরফে সংবর্ধনা নিয়ে হেলিকপ্টারে নড্ডা পৌঁছন মায়াপুরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৯
Share:

নদিয়ার বেথুয়াডহরির জনসভায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। ছবি: প্রণব দেবনাথ

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি পদে মেয়াদ বৃদ্ধির পরে বাংলায় এসে প্রথম সভা থেকেই ‘দুর্নীতি’ নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন জগৎপ্রকাশ নড্ডা। দিলেন ‘জেলে পোরা’র হুঁশিয়ারি। তাঁর প্রশ্ন, চুরিও করবেন, আবার গা-জোয়ারিও করবেন? তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, দেশের সর্বকালের সব চেয়ে ‘অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত’ দলের কোনও নেতার মুখে তারা এই কথা শুনতে রাজি নয়।

Advertisement

কলকাতায় বুধবার গভীর রাতে পৌঁছেছিলেন নড্ডা। রাজারহাটের হোটেলে বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্য বিজেপির তরফে সংবর্ধনা নিয়ে হেলিকপ্টারে নড্ডা পৌঁছন মায়াপুরে। সেখানে ইসকন মন্দিরে পুজো দিয়ে সড়কপথে পৌঁছন নাকাশিপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বেথুয়াডহরিতে। সেখানেই সভা করেন তিনি। সভায় তাঁর বক্তব্যে আগাগোড়াই ছিল তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ। তাঁর দাবি, আবাস যোজনা থেকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প, সর্বস্তরে চুরি হয়েছে। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে তদন্ত হলে আপনার কেন রাগ হচ্ছে? ১০০ দিনের কাজ নিয়ে তদন্ত হলে আপনার কেন রাগ হচ্ছে?” কটাক্ষের সুরে বাংলায় নড্ডা বলেন, ‘‘দিদি, এত রাগ কোরো না! স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। সংবিধান মেনে চলুন।”

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তুলনা টেনে তিনি বলেন, ‘‘মোদী সরকার ইমানদার সরকার, আপনার সরকার বেইমান সরকার!” নড্ডার দাবি, দেশে সব চেয়ে বেশি নারী পাচার হয় এই রাজ্য থেকে। এই রাজ্য সব দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। মঞ্চ থেকে তাঁর প্রশ্ন, “বাংলার কী হাল করে রেখেছেন দিদি?” পাল্টা তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, “কে বেইমান আর কে আস্থাভাজন, তা বাংলার মানুষ প্রায় দেড় দশক ধরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাংলায় ২০০৯ সাল থেকে পরপর লোকসভা, বিধানসভা-সহ স্থানীয় স্তরের নির্বাচনগুলিতে মানুষের রায় দেখে নিলেই বিজেপি নেতারা এই মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেবেন। আর তা না হলে অপেক্ষা করুন, পঞ্চায়েত আর লোকসভায় ফের দেখতে পারেন!”

Advertisement

দুর্নীতি নিয়ে বিজেপি সভাপতির আক্রমণ, “মোদীজি টাকা পাঠাবেন আর এখানে দুর্নীতি হবে! আর যখন তদন্ত হবে, তখন বলবেন ‘ভারত সরকার আমার শত্রু’! আপনি চুরিও করবেন, আবার গা-জোয়ারিও করবেন!” জনতার উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, “আপনারা কি চান, এই দুর্নীতির শেষ হোক? তা হলে পদ্মফুলে ছাপ দিন। আমরা এখানে দাঁড়িয়ে কথা দিয়ে যাচ্ছি, আমরা দুর্নীতি শেষ করবই। দুর্নীতিতে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সবাইকে জেলে ভরবই।”

সুখেন্দুর পাল্টা বক্তব্য, “স্বাধীনতার পরে বিজেপির মতো দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অসৎ কোনও দল দেশের ক্ষমতায় আসেনি। জনগণের সম্পত্তি বিক্রি করে দল আর দলের পৃষ্ঠপোষক ব্যবসায়ীদের সম্পদ বৃদ্ধি করা নেতা-মন্ত্রীদের মুখে সততা আর নীতিজ্ঞান তৃণমূল শুনবে না। যাদের জেলে থাকার কথা, তাঁদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করছে। আর ক্ষমতায় আছে বলে বিরোধীদের গলা টিপে ধরতে জেল, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করছে বিজেপি।” তৃণমূলের তরফে বিবৃতিতেও পাল্টা দাবি করা হয়েছে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরেই আবাস যোজনায় তিন লক্ষের মধ্যে এক লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি নাম বাদ গিয়েছে। ওই জেলায় ২০১৮ সালে শাসক দলের নেতা তো ছিলেন শুভেন্দুই। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত নিয়ে বিজেপি নেতারা এত হইচই করলে নারদ-কাণ্ডে এফআইআরে নাম থাকা শুভেন্দুকে কেন ধরা হবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।

নড্ডার বক্তব্যের সমাপ্তি-পর্বেও ছিল চমক। যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া নিয়ে প্রতিদিন বিজেপি নেতাদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয় তৃণমূলকে, এ দিন ‘জয় ভারতে’র সঙ্গে সেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েই নিজের বক্তব্য শেষ করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।

এর পরে স্থানীয় একটি অতিথি শালায় নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নড্ডা। সেখানে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জনসংযোগ তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ক্লাব সংগঠনের কাজের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের যুক্ত হতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি বলে জানা গিয়েছে। বিকেলে হেলিকপ্টারেই কলকাতা ফেরেন তিনি। তার পরে, বারাণসীর উদ্দেশে রওনা হয়ে গিয়েছেন নড্ডা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement