ড্রাগন ফল হাতে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
দিলীপ ঘোষ প্রথম পরিচিতি পেয়েছিলেন আরএসএসের প্রচারক হিসাবে। তার পরে সঙ্ঘের নির্দেশেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। এ বার ‘বিবেকের ডাকে’ আবার প্রচারকের ভূমিকায় যেতে চান তিনি। তবে সংগঠন নয়, ‘কৃষি-প্রচারক’ হতে চান তিনি। পরীক্ষামূলক ভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন খড়্গপুরে। এ বার রাঢ়বঙ্গের মাটিতে এই ফল চাষের মাধ্যমে কী ভাবে ছোট কৃষকদের ভাগ্যবদল সম্ভব, তা নিয়ে কথাবার্তা শুরু করেছেন। দিলীপের ভাবনা, সাধারণ চাষের বদলে বিভিন্ন রকম লাভজনক ফলের চাষ নিয়ে তিনি প্রচার চালাবেন। কৃষকদের সঙ্গে তিনিও চাষের কাজে যোগ দেবেন।
এখন বাংলার বাজারে ড্রাগন ফল সহজলভ্য। কিন্তু সে ভাবে চাষাবাদ হয় না। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার এই ফল মেক্সিকোতেও উৎপাদন হয়। আবহাওয়াগত কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতেও ড্রাগন ফলের চাষ হয়। কিন্তু সেই ফলের চাষ বাংলায় করার ভাবনা কী করে এল দিলীপের মাথায়? বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি থাকার সময়েই দিলীপ উত্তর-পূর্ব ভারতে গিয়ে ড্রাগন ফলের চাষ দেখেছিলেন। দিলীপ বলেন, ‘‘সেই সময়েই আমার মনে হয়েছিল, বাংলার মাটিতে এই ফলের চাষ করা গেলে ভাল হয়। তখন থেকেই শুরু করি খোঁজখবর। এখন এর প্রচার করে বাংলার কৃষকদের স্বাবলম্বী করতে চাই।’’
মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ গত লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে পরাজিত হয়েছেন। এখন দিলীপের কোনও সাংগঠনিক দায়িত্বও নেই। নির্বাচনে পরাজয়ের পরে দল কোনও দায়িত্ব না দিলে রাজনীতি থেকে দূরে চলে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন দিলীপ। তবে দলে সম্ভাব্য রদবদল চালু না হওয়ায় এখনও বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি নিয়মিত। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে দলের মিছিল-ধর্নায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মসূচিতেও অংশ নিয়েছেন। বিজেপির সদস্যসংগ্রহ অভিযানের প্রচারে ত্রিপুরায় গিয়েছেন। গত সোমবার ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ধানবাদ গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে সঙ্গেই ‘কৃষি-প্রচারক’ হয়ে ওঠার কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন কৃষি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তিনি ড্রাগন ফল চাষ নিয়ে আলোচনাও করেছেন।
খড়্গপর সদরের বিধায়ক থাকার সময় থেকেই দিলীপের একটি বাসভবন রয়েছে ওই রেলশহরে। তারই ফাঁকা জমিতে ২০২২ সালে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন তিনি। জৈব চাষের মাধ্যমে বাগানও তৈরি করেন। সম্প্রতি সে সব গাছে ফল আসতে শুরু করেছে। দিলীপের বাগান ভরে উঠেছে গোলাপি ফলে। দিলীপ বলেন, ‘‘বাজারে অনেক বড় বড় ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। তবে তাতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। আমি একেবারে জৈব পদ্ধতিতে করেছি। লাল মাটিতে যে সেটা সম্ভব, তার সফল উৎপাদনের পরে মূলত জঙ্গলমহলের কৃষকদের এই চাষে আগ্রহী করতে চাই।’’ একই সঙ্গে দিলীপ বলেন, ‘‘এখানকার মাটিতে বর্ষা ভাল না হলে ধান হয় না। সেই সময়ে এই ফলের চাষ লাভজনক হতে পারে।’’
রাজনীতি ছেড়ে কি তবে তিনি এ সবই করবেন? দিলীপের জবাব, ‘‘রাজনীতি মানে কি শুধু মিটিং-মিছিল নাকি? সাধারণ মানুষের উপকারই হল ‘রাজা’ নীতি। এখন বাজারে যত ফল রয়েছে, তাদের রাজা ‘ড্রাগন’। সেটাই বাংলার কৃষকদের স্বাবলম্বী করতে পারে বলে আমি মনে করি।’’ বিজেপিতে তেমন আলোচনা না থাকলেও এখনও দিলীপের অনুগামীদের অনেকেই মনে করেন তাঁদের দাদা বড় দায়িত্ব পেতে পারেন। রাজ্যে না হলেও সর্বভারতীয় দায়িত্ব পেতে পারেন দিলীপ। সেই সম্ভাবনা নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও দিলীপ বলেন, ‘‘সব কাজ তো আমি করব না। কৃষির প্রচারের জন্য আমার একটা টিম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। তারাই সেই কাজটা করবে।’’
দিলীপ নিজে কৃষক পরিবারের সন্তান। ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের কুলিয়ানা গ্রামে পৈতৃক সম্পত্তির মধ্যে চাষের জমিও রয়েছে তাঁর। দিলীপ বলেন, ‘‘আমাদের জমিতে এখন ভাইয়েরা চাষাবাদ করেন। সেখানেও ড্রাগন ফলের চাষ করা যায় কি না দেখব। একই সঙ্গে কৃষকদের এটাও প্রস্তাব দেব যে, আমরা টাকা এবং প্রশিক্ষণ দেব। তাঁরা নিজেদের জমিতে চাষ করবেন। লাভের টাকা কী ভাবে ভাগ হবে, সেটাও ঠিক করে নেওয়া যাবে।’’