BJP Bengal

BJP Bengal: পুরভোটের আগে বিজেপি বিপর্যস্ত, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ‘অসন্তোষ’ প্রকারান্তরে মানলেন দিলীপ

রাজ্য বিজেপি-তে শুভেন্দু-দিলীপ দ্বন্দ্ব নতুন নয়। দিলীপ সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হওয়ার পরও সে দুরত্ব কমেনি, তা যেন এ বারের মন্তব্যে ফের স্পষ্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ১১:৩০
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে দলে যে ‘অসন্তোষ’ রয়েছে, তা প্রকারান্তরে বলেই দিলেন প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বৃহস্পতিবার তিনি ওই মন্তব্য করার পরেই বিজেপি কর্মীদের একাংশ দিলীপের সমালোচনা শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, দিলীপ ওই মন্তব্য করেছেন দল থেকে সদ্য-বহিষ্কৃত হাওড়া সদরের বিজেপি নেতা সুরজিৎ সাহার একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে। যেখানে তিনি নারদ-ভিডিয়োর প্রসঙ্গ তুলে শুভেন্দুকে ‘অসৎ’ বলেছিলেন।

বৃহস্পতিবার দিলীপকে ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সুভেন্দুর নাম না-করে তিনি বলেছেন, “অসন্তোষ তো অনেকের বিরুদ্ধেই আছে। আমার বিরুদ্ধেও থাকতে পারে।”

Advertisement

অর্থাৎ, ‘অসন্তোষ’ আছে। শুভেন্দুর নাম না করলেও যেহেতু সুরজিতের শুভেন্দু-সংক্রান্ত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দিলীপকে ওই প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাই রাজ্য বিজেপি-র একাংশ মনে করছে, প্রকারান্তরে দিলীপ বুঝিয়ে দিয়েছেন, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দলে অসন্তোষ আছে। আবার পাশাপাশিই, তাঁর বিরুদ্ধেও অসন্তোষ রয়েছে বলে তিনি বিষয়টিকে ‘লঘু’ করতে চেয়েছেন।

যাঁরা দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদের দলীয় শৃঙ্খলার কথা স্মরণ করিয়ে বলেছেন, ‘‘ভোটের পর থেকে কর্মীদের মনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে। যা ফল হয়েছে, যে ভাবে লোক নেওয়া হয়েছে, এই সব বিষয়ে অনেকে আগেও বলেছেন। পরেও বলেছেন। আস্তে আস্তে সকলে বুঝতে পারছেন, দলে থাকতে হলে দলের নিয়ম মেনেই চলতে হবে। কিছু বলার থাকলে দলের মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় বলতে হবে।”

Advertisement

বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না হওয়ার পর থেকেই বিপর্যস্ত রাজ্য বিজেপি। দলে ভাঙন অব্যাহত। একই সঙ্গে জেলায় জেলায় বিক্ষোভও প্রকাশ্যে এসেছে। কলকাতা ও হাওড়া পুরসভা নির্বাচনের আগে সেই ক্ষত আরও দগদগে চেহারা নিতে শুরু করেছে। সম্প্রতি হাওড়া সদর জেলার সভাপতি সুরজিতের মন্তব্য, তাঁকে বহিষ্কার এবং সেই প্রেক্ষিতে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপের বক্তব্যে সেই বিষয়টিই আরও একবার প্রকাশ্যে এল বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজ্য বিজেপি-তে শুভেন্দু ও দিলীপের সম্পর্ক ‘মধুর’ বলেই জানেন সকলে। ফলে দিলীপের বৃহস্পতিবারের মন্তব্য নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার হাওড়া পুরভোটের প্রস্তুতি বৈঠক করে বিজেপি। সেখানে ঠিক হয়, পুরভোট পরিচালনার জন্য একটি ‘জ়োন’ গঠন করে তার দায়িত্ব দেওয়া হবে হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তীকে। সুরজিৎকে করা হবে কমিটির সহ-আহ্বায়ক। তাতে ক্ষুব্ধ সুরজিৎ বুধবার বলেন, “আমরা হাওড়া জেলার কর্মীরা তৃণমূলের বি-টিমের অধীনে কাজ করব না।” শুভেন্দুর হাত ধরেই তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে এসেছিলেন রথীন। বিজেপি-র একাংশের দাবি, পুরসভা নির্বাচনে রথীনকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব শুভেন্দুই দেন। যদিও এর কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি।

সুরজিৎ‌ রথীনের পাশাপাশি আক্রমণ করেন শুভেন্দুকেও। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা দলে থাকবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাঁদের চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। নাম প্রস্তাব করছেন শুভেন্দু। বিজেপি-র তৃণমূলীকরণ আমরা মানব না। আমি ২৮ বছর বিজেপি করছি। উনি ছ’মাস আগে দলে এসে আমাদের শংসাপত্র দেবেন না কি? আমরা ওঁর শংসাপত্র চাইব। নারদাতে ওঁকে যে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে তাতে উনি সৎ কি না, এই প্রশ্নটা জনগণ থেকে দলের কার্যকর্তা সকলের মধ্যে তৈরি হয়েছে। উনি আমাদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলবেন এটা জেলা সভাপতি হিসাবে মেনে নেব না।’’

এর পরে পরেই বিজেপি সুরজিৎকে বহিষ্কার করে। দলের অন্দরে বক্তব্য শোনা যায় শুভেন্দুর সমর্থনে। আবার সুরজিতের বক্তব্যের সমর্থনে দলের একাংশ বলছে, এখন তো শুধু হাওড়া, কলকাতার ভোট ঘোষণা হয়েছে। রাজ্যের সব পুরসভায় ভোট ঘোষণা হলে এমন প্রতিবাদ আরও আসবে। সেখানেও অন্য দল‌ থেকে আসা নেতাদের মাথায় বসানো হলে প্রতিবাদ হতে পারে। তখন কি সকলকেই বহিষ্কার করা হবে?

এমন সম্ভাবনা কি আছে? দিলীপের জবাব, “কেউ দলের শৃঙ্খলা ভাঙলে দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এটাই তো দলের পক্ষে যুক্তিসঙ্গত কাজ। আর নেতা দিয়ে ভোট জেতা যায় না। বুথ স্তরের কর্মীরাই লড়াই করেন। সেই লড়াইয়েই জয় আসে। সুতরাং এ সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement