দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
হাই কোর্টের এক শতাংশ বিচারপতি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘তল্পিবাহক’ হিসেবে কাজ করছেন বলে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই অভিযোগের উপরে মন্তব্য করতে গিয়ে এ বার বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলে দিলেন, রাজ্যে শাসক দল পুলিশ-প্রশাসনের পাশাপাশি আদালতকেও কিনে নিয়েছে। কয়েক জন বিচারপতি মেরুদণ্ড সোজা রেখে চলার চেষ্টা করছেন, তাঁদেরই নিশানা করা হচ্ছে।
এমন মন্তব্য করে দিলীপ সামগ্রিক ভাবে বিচারব্যবস্থারই অবমাননা করেছেন বলে তৃণমূল সরব হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ অভিষেকের মন্তব্যের জেরে যে রাজ্যপাল মুখ্যসচিবকে পদক্ষেপ করতে বলেন, তিনি এখন বিজেপি সাংসদ দিলীপের বেলায় সক্রিয় হবেন কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে সিপিএমও।
অভিষেকের বিচারপতি সংক্রান্ত মন্তব্যের উপরে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সোমবার নদিয়ার আসাননগরে বিজেপি নেতা দিলীপ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কোনও সাংবিধানিক সংগঠনকে মানা হয় না। এখানে তারা (শাসক) ভয় দেখিয়ে, লোভ দেখিয়ে পুলিশ-প্রশাসন, কোর্ট সবাইকে কিনে নিয়েছে। সবার মেরুদণ্ড ঝুঁকে গিয়েছে! কয়েক জন বিচারপতি এখনও আছেন, যাঁরা মেরুদণ্ড সোজা রেখে, চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন, তাই তাঁদের নিশানা করা হচ্ছে। ঘুরিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে।’’ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) মামলায় যে বিচারপতি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি কোথাও কোথাও বলেছেন ‘কানে বন্দুক ঠেকালেও সরব না’— এই কথাও উল্লেখ করেছেন দিলীপ। পাশাপাশিই তাঁর অভিযোগ, বাংলায় কোনও ‘সাংবিধানিক সংগঠন’কেই মানা হয় না।
এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ করে একটি মন্তব্য করেছিলেন। দিলীপবাবু তো সামগ্রিক ভাবে বিচারব্যবস্থার অবমাননা করেছেন! আগেও কাকে গ্রেফতার করতে হবে, কাকে ছাড়তে হবে, এ সব নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বিজেপি নেতারা।’’ কুণালের আরও প্রশ্ন, ‘‘এ বার নিশ্চয়ই রাজ্যপাল তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলবেন! যে আইনজীবীরা অভিষেকের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন, তাঁরা দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে আদালতে যাবেন?’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি নেতারা এই ধরনের মন্তব্য করে জ্বলন্ত সমস্যা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন। প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বিচারব্যবস্থাকে অসম্মান করছেন, আদালতের প্রতি মানুষের আস্থাতেও ধাক্কা দিতে চাইছেন। বিচার প্রক্রিয়া ঠিক মতো চললে দু’টো দলেরই অসুবিধা!’’
শ্যামনগরে তৃণমূলের সভায় অভিষেক এ দিনই প্রশ্ন তোলেন, দিলীপ যখন কুকথা বলেন, ‘অসভ্যের মতো’ মন্তব্য করেন, তখন কিছু হয় না? তার জবাবে দিলীপের আবার পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘আমরা তো অসভ্য, গ্রামের লোক! সাম্প্রদায়িক দল করি, কী বলতে হয়, জানি না! কিন্তু ওঁরা তো শিক্ষিত লোক। তাঁরা কেন অসভ্যের মতো ব্যবহার করছেন? ভাল উদাহরণ রাখুন!’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।