দিলীপ ঘোষ। ফাইল ছবি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগে আগে গত ২১ মে রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে রাজ্যের সংগঠন নিয়ে সরব হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। ভোটের পরে পর্যালোচনা বৈঠকেও একই ভাবে রাগত সুরে রাজ্য নেতৃত্বের ‘ত্রুটি’ ধরালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। দিলীপ জমানার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফলের সঙ্গে তুলনা করে যখন রাজ্য বিজেপি নেতারা বাংলায় শক্তি বৃদ্ধির কথা বলছেন তখনই এ বারের ফল নিয়ে দলীয় বৈঠকে প্রশ্ন তুললেন দিলীপ।
গত ৮ জুন রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হয়। তার ঠিক আগে আগে জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনে (এখন নাম শ্যামপ্রসাদ ভবন) বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে মূলত পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই আলোচনা হয়। সেখানেই দিলীপ দলের জেলাস্তরের সংগঠনের নানা দিক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জেলায় হওয়া বৈঠকে নেতাদের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বিভিন্ন স্তরে দলের যে সংগঠন রয়েছে তার কতটা খাতায়কলমে আর কতটা বাস্তবে তা নিয়েও আক্রমণাত্মক ছিলেন দিলীপ। আর রবিবার দলের সল্টলেক দফতরে তিনি দলের শক্তঘাঁটি উত্তরবঙ্গে কেন ভাল ফল হল না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জেতা জায়গায় কেন হার হয়েছে, কেন ভোটের দিন এজেন্টরা বুথ ছেড়ে আগেই বেরিয়ে গিয়েছেন এ সব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতার কথায়, ‘‘দিলীপদা কর্মীদের পরিচালনার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের কোনও ত্রুটি ছিল কি না তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু রাজ্য নেতারাই নন, জেলা নেতারাও সঠিক ভূমিকা নিয়েছিলেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।’’
রবিবার রাজ্য সভাপতি সুকান্তের ডাকা বৈঠকে রাজ্যের সব নেতাই হাজির ছিলেন। ডাক পেয়েছিলেন দলের বিভিন্ন মোর্চার নেতারাও। একই সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের দায়িত্ব পাওয়া চার কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্য এবং আশা লাকড়া। সেখানেই ‘রাগী সুরে’ দিলীপ সরব হন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে এর মধ্যে দোষের কিছু দেখছেন না অনেক রাজ্য নেতাই। তাঁদের একজন বলেন, ‘‘দিলীপদা রাজ্যের প্রাক্তন সভাপতি। এখন সর্বভারতীয় দায়িত্বে। একই সঙ্গে তিনি সাংসদ। সব মিলিয়ে রাজ্য বিজেপির অভিভাবক তিনি। ফলে দিলীপদা দলের ত্রুটি বিচ্যুতি দেখিয়ে দেওয়ার যোগ্য লোক। সেই কাজটাই তিনি করেছেন। এর মধ্যে রাগারাগির কিছু নেই।’’
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই ২০১৮ সালের ফলের সঙ্গে ২০২৩-এর পরিসংখ্যানের তুলনা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বলা হচ্ছে, ভোটের হার ১৩ থেকে বেড়ে ২৩ শতাংশ হয়েছে। রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস সত্ত্বেও বৃদ্ধি ৭৬ শতাংশ। এখানেই আপত্তি দিলীপ শিবিরের। তাঁদের বক্তব্য, এর পরে রাজ্যে গত লোকসভা নির্বাচনে দিলীপের নেতৃত্বেই বিজেপি ৪০.৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। পরে বিধানসভায় ভোটপ্রাপ্তি কমলেও ৩৮.১৬ শতাংশ মিলেছিল ২০২১ সালে। সেই ভোট কমে ২৩ শতাংশে নামল কেন? যদিও পদ্মের রাজ্য নেতারা বলছেন, লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের তুলনা করা উচিত নয়।