সিমলাপাল মদনমোহন স্কুলে গণনাকেন্দ্রে প্রস্তুতী। ছবি: শুভেন্দু তন্তুবায়।
আর জি কর কাণ্ডে রাজ্য জুড়ে উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই তালড্যাংরার উপনির্বাচন ঘোষণা হয়েছিল। তাই আজ, শনিবার তালড্যাংরার জনমতে আর জি কর কাণ্ডের কোনও ছাপ পড়ে কি না, সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। বিরোধীরা আশাবাদী হলেও তৃণমূল নেতৃত্ব আমল দিতে নারাজ।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন থেকে তালড্যাংরা বিধানসভার ফলাফলে ওঠাপড়া দেখা গিয়েছে। পাঁচ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে তালড্যাংরা কেন্দ্রে তৃণমূল ১৭,২৬৮ ভোটে বিজেপির কাছে পিছিয়ে ছিল। তালড্যাংরা-সহ জঙ্গলমহল জুড়েই বিজেপির পক্ষে হাওয়া ছিল। তবে বছর দুয়েকের ব্যবধানে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেই ছবিটা পাল্টে যায়। সে বার তৃণমূল এই কেন্দ্রে ১২,৩৩৭ ভোটে বিজেপিকে হারায়। জঙ্গলমহলের বাকি দুই কেন্দ্র রাইপুর ও রানিবাঁধেও পর্যুদস্ত হতে হয় বিজেপিকে। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের তিনটি স্তরেই তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-সহ বিরোধীদের খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দেয় তৃণমূল। যদিও গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের ধারা বজায় থাকলেও ২০২১-এর থেকে বিজেপির সঙ্গে ভোটের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ৭,৪৮৩।
বিজেপির দাবি, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোটের হাওয়া ছাইচাপা আগুন হয়ে রয়েছে তালড্যাংরায়। এ বার উপনির্বাচনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূলের দুর্নীতি, রাজ্য জুড়ে নারী নির্যাতন ও আর জি কর কাণ্ডের ক্ষোভকে সামনে রেখেই মানুষ ভোট দিয়েছেন। তাই ফলাফলে চমক থাকবে। বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের অনেকের দাবি, দলের বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে ফলাফল উঠে এসেছে তাতে ২-৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হলেও দলীয় প্রার্থীই জিতবেন।
যদিও সে দাবি নস্যাৎ করে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের থেকেও বড় ব্যবধানে জয়ের দাবি করছে ঘাসফুল শিবির। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকার গড়ার লক্ষ্যে মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। তাই জয়ের ব্যবধান কমেছিল। কিন্তু সেই ভোটে পরাজয়ের ধাক্কা বিজেপি কর্মীরা কাটাতে পারেননি। এ বার সিপিএম ও কংগ্রেস পৃথক ভাবে ভোটে লড়ায় বিরোধী-ভোটও বিজেপিমুখী হতে পারেনি। তবে সিপিএম নেতৃত্বের আশা, তাঁরা বাড়ি বাড়ি প্রচারে বিশেষ জোর দেওয়ায় ভোট বাড়বে। কংগ্রেসেরও দাবি, একক ভাবে ভোটে লড়ায় তাঁদের নিশ্চিত ভোট আগের থেকে বাড়বে।
বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, “তালড্যাংরা কেন্দ্রের আওতায় থাকা সব ক’টি পঞ্চায়েত থেকেই আমাদের কর্মীরা গণনা কেন্দ্রের সামনে যাবেন। কেন্দ্রের ভিতরেও পর্যাপ্ত কর্মী থাকবেন। দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি জানান, রাজ্যের নারী সুরক্ষা এ বার ভোটে বড় বিষয় ছিল। ইভিএমে তার প্রতিফলন ঘটবেই। একই দাবি জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তবে বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “বিরোধীরা স্বপ্নই দেখুন। ইভিএম খুললে তৃণমূলের জয়ের ধাক্কায় ওঁদের ঘুম ভাঙবে।’’