শাসকদলের পার্টি অফিসেরই দখল নিয়ে ফেললেন নির্দল প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র।
নির্দল প্রার্থীর কাছে ভোটে হারছেন দেখে ব্যালট ছিনিয়ে পালিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী! এই অভিযোগ ওঠায় ভোট বাতিল হয়ে গিয়েছে সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ির ১৩ নম্বর বুথে। পুনর্নির্বাচন হবে সেখানে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই তৃণমূলের সেই প্রার্থী কার্যত বেপাত্তা। এলাকায় মুখ দেখাতে পারছেন না অনুগামীরাও! এই ‘সুযোগে’ শাসকদলের পার্টি অফিসেরই দখল নিয়ে ফেললেন নির্দল প্রার্থী।
বেড়াবেড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ বছর প্রধান এবং পাঁচ বছর উপপ্রধান পদে থাকা দীপঙ্কর ঘোষকে এ বার প্রার্থী করেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় প্রতীক না মেলায় নির্দল হিসাবে পঞ্চায়েত ভোটে লড়েছিলেন শাসকদলের নেতা। দল যাঁকে প্রার্থী করেছে, সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি আনন্দমোহন ঘোষের বিরুদ্ধে জিতছিলেনও তিনি। কিন্তু শেষবেলায় ব্যালট ছিনিয়ে পালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। রিটার্নিং অফিসারের রিপোর্টের ভিত্তিতে ভোট বাতিলও হয়ে গিয়েছে ওই বুথে। তার পর থেকেই এলাকায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
স্থানীয় সূত্রে দাবি, ভোট বাতিল হওয়ার পর থেকে এলাকায় দেখাই যাচ্ছে না আনন্দমোহনকে। তাঁর পার্টি অফিসে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলীয় কার্যালয় এখন দীপঙ্করের দখলে! যদিও কার্যালয়ের বাইরে এখনও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভিতরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি টাঙানো রয়েছে। দীপঙ্কর বলেন, ‘‘এই দোতলা অফিসটা আমি তৈরি করেছিলাম। সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম মান্না বা অন্য কারও সাহায্য নিইনি।’’
পঞ্চায়েত ভোটে দল টিকিট না দেওয়ায় ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে গিয়েছেন সিঙ্গুরে শাসকদলের আর এক নেতা দুধকুমার ধাড়া। তাঁর দাবি, দল এ বার মনোনয়ন জমা দিতে বলেও প্রতীক দেয়নি তাঁকে। তাই তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। দুধকুমার বলেন, ‘‘এখানে যাঁরা তৃণমূল করেন, তাঁদের আর ওই পার্টি অফিসে যাওয়ার মুখ নেই। কারণ, তৃণমূলের প্রার্থী ব্যালট ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য কাজ করেছেন। তাই কেউই পার্টি অফিসে যেতে পারছেন না। বেরাবেরির যাঁরা পুরনো তৃণমূল কর্মী, তাঁদের কাউকেই এ বার টিকিট দেওয়া হয়নি। অনেকেই বসে গিয়েছেন। আমি সিঙ্গুর ব্লকের সম্পাদক। আগামী দিনে হয়তো এই দলটাই আর করব না।’’
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দলীয় কার্যালয় দখল হয়ে যাওয়া নিয়ে ভাবিত নন। সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি গোবিন্দ ধাড়া বলেন, ‘‘এটা নির্দলের পার্টি অফিস নয়, তৃণমূলেরই পার্টি অফিস। দীপঙ্করও তৃণমূলেই ছিলেন। নিশ্চয়ই কোনও কারণ ছিল, তাই দল তাঁকে টিকিট দেয়নি। এখন নির্দল হয়েছেন। যদি ক্ষমতা থাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, বেচারাম মান্নার ছবি ফেলে দিয়ে নির্দলের অফিস বলে লিখুন তিনি। তা হলে তিনি কত বড় বাপের ব্যাটা, বোঝা যাবে। পার্টি অফিস কখনও ব্যক্তিগত হয় না। এটা দলেরই। এখন ওখানে পুলিশ পাহারা আছে। সিআরপিএফ আছে। পঞ্চায়েত গঠন হলে আমরাই অফিসের দখল নেব।’’