দেবদাস মণ্ডল
তখন তিনি ছিলেন বামপন্থী। সিপিএমের সমর্থক। বছর কুড়ি আগে একটি খুনের মামলায় নাম জড়িয়েছিল দেবদাস মণ্ডলের। এবং অন্য কয়েক জনেরও। লাল শিবির বদল করে দেবদাস এখন গেরুয়া শিবির অর্থাৎ বিজেপির নেতা। পুরনো সেই মামলা নতুন করে আদালতে ওঠার পরে সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালত থেকে মামলার নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
খুনের মামলা তামাদি হয় না কখনওই। তবে এত দিনের পুরনো মামলা খুঁড়ে তোলায় ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ খুঁজে পাচ্ছে পদ্ম শিবির। দেবদাস বলেন, ‘‘আদালত আমাকে জামিন দিয়েছিল। এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সেই মামলা খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে।’’ ১৯৯৯-এর ৫ নভেম্বর ভোরে বনগাঁর মতিগঞ্জের বাসিন্দা সূর্যশঙ্কর রায়চৌধুরীর গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। তৃণমূল-সমর্থক ওই যুবক এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন। সূর্যের ভাই সিদ্ধার্থ থানায় অভিযোগ করেন। দেবদাস-সহ আট জনকে গ্রেফতার করা হয়। খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপাট, অস্ত্র আইনে মামলা করে চার্জশিটও দেয় পুলিশ। পরে দেবদাস এবং অন্য অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে যান। তার পরে মামলা আর বিশেষ এগোয়নি। শেষ বার শুনানি হয় বছর চারেক আগে, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর।
মঙ্গলবার সূর্যের অন্য এক ভাই সৌমেন্দ্র আদালতে আবেদন করেন, বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘বিচারক মঙ্গলবার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে মামলার মূল নথি সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে।’’ নথিপত্র সংগ্রহে নেমে বুধবার জিআরও অফিসে গিয়ে তদন্ত করেন এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার। তবে বুধবার পর্যন্ত নথি মেলেনি বলে জানান তিনি।
খুনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার মূল নথি কী ভাবে গায়েব হয়ে যেতে পারে? সমীরবাবু বলেন, ‘‘একটি চক্র এতে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করে তাদের খুঁজে বার করছে। বিচার দ্রুত শুরু হবে।’’
পুরনো মামলা নতুন করে খুঁড়ে বার করার মধ্যে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ই খুঁজে পাচ্ছেন দেবদাস। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি দেবদাস বলেন, বলেন, ‘‘বিজেপি বনগাঁ পুরসভার ক্ষমতা দখল করতে চলছে। তাই পুলিশ ও তৃণমূল চক্রান্ত করে আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘সূর্য খুনের মামলায় আমাদের দলের কোনও ভূমিকা নেই। আইন আইনের পথে চলবে। আমরা চাই, দোষীদের শাস্তি হোক।’’
দেবদাসের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা ফের সামনে আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। ১৯৯৭ এবং ২০১৩ সালের দু’টি মামলা ছাড়াও কয়েক দিন আগে অন্য দু’টি মামলায় নাম জড়িয়েছে তাঁর। দেবদাসের সঙ্গী নারায়ণ ঘোষ ওরফে নান্টুর বিরুদ্ধেও দায়ের করা বিভিন্ন মামলা আবার সামনে আসতে পারে। তার মধ্যে আছে ১৯৮৭, ১৯৮৯ এবং ২০০৫ সালের মামলা।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।