বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দেবীপক্ষের সূচনায় বড় চমক দিলেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। মেদিনীপুরের সাংসদ নিজের নামকে মিশিয়ে দিলেন নিজের লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে। রবিবার দিনই তাঁর ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে রয়েছে সেই চমক। ইংরেজিতে মেদিনীপুর বানানের মধ্যেই রয়েছেন দিলীপ। সঙ্গে দেবী দুর্গা এবং দিলীপের ছবি।
কেন এই চমক? লোকসভা আসনের নামের মধ্যে তাঁর নাম কেন? দিলীপের বক্তব্য, ‘‘এ আমার পূজা। আমি অখণ্ড মেদিনীপুর জেলায় জন্মেছি। আমি কোনও দিন রাজনীতি করব ভাবিনি। কিন্তু এ সম্ভবত ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল, তাই আজ আমার কর্মভূমিও মেদিনীপুর। কয়েক দিন আগে লক্ষ্য করলাম, আমার নামটাও সামান্য বদলে লুকিয়ে রয়েছে আমার মেদিনীপুর আসনের মধ্যে। দেবীপক্ষে আমি সেটাকেই সামনে এনেছি।’’ কেন এমনটা করেছেন, তা নিয়ে দিলীপের নিজস্ব বক্তব্যও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি মেদিনীপুরের সঙ্গে মিশে থাকি। সেটা কাজের মধ্য দিয়ে। এ বার নামের মধ্যে দিয়েও মিশলাম। নিজেকে আগেই দেশের জন্য, সমাজের জন্য উৎসর্গ করেছি। তারই অঙ্গ মেদিনীপুরের জন্যও নিজেকে উৎসর্গ করেছি। তারই প্রকাশ।’’
সমাজমাধ্যমে দিলীপের কভার ছবি বদলে গেল দেবীপক্ষে। ছবি: সংগৃহীত।
প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোপীবল্লভপুরের সন্তান দিলীপ। কুলিয়ানা গ্রামে জন্ম। এর পরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সঙ্গে যোগাযোগ, নিয়মিত স্বয়ংসেবক থেকে প্রচারক জীবন। পরে বিজেপিতে আসেন। খুব কম সময়ের মধ্যেই দলের রাজ্য সভাপতি হন। আর তার পরেই এই জেলারই খড়্গপুর সদর আসন থেকে বিধানসভায় যান। পরে সেই আসন ছেড়ে দিয়ে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হন এবং জেতেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর সভাপতিত্বেই লড়াই করে বিজেপি। পরে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হন। তবে এখন শুধুই মেদিনীপুরের সাংসদ। দিলীপ দাবি করেন, সামনে লোকসভা নির্বাচন বলেই তাঁকে দায়িত্বমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তবে কি এখন থেকেই লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন দিলীপ? বিজেপি সাংসদ বলেন, ‘‘আমি ওই রকম ছাত্র নই, যারা পরীক্ষা এলে পড়াশোনা করে। গত সাড়ে চার বছর ধরে মেদিনীপুরকেই আমার ধ্যানজ্ঞান করেছি। দলের পক্ষে অন্যত্র যা যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা পালনের পাশাপাশি নিজের এলাকায় সময় দিয়েছি। সব চাহিদা হয়তো পূরণ করতে পারিনি কিন্তু আমার সামর্থ্যে যা যা সম্ভব ছিল, সবই করেছি। এখন পরীক্ষার আগে শুধু রিভিশন করলেই আমার হয়ে যাবে।’’
দিলীপ এ-ও জানিয়েছেন যে, দেবীপক্ষ জুড়েই এমন চমক থাকবে তাঁর সমাজমাধ্যমে। প্রতি দিনই জেলার কথা, জেলার মানুষের কথা, ধর্মের কথা বলতে থাকবেন বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে। কেমন হবে সেই সব পোস্ট, তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ দিলীপ বলেন, ‘‘অপেক্ষা করুন। সব একে একে দেখতে পাবেন।’’ সেই সঙ্গে দিলীপের বক্তব্য, ‘‘আপনি যেটাকে চমক বলছেন, আমার কাছে সেটা আসলে পূজা। নিজের জেলা, নিজের এলাকার প্রতি, সেখানকার মানুষের উদ্দেশে নবরাত্রির পবিত্র দিনগুলিতে শ্রদ্ধা প্রকাশ।’’
এ কি শুধুই শ্রদ্ধা প্রকাশ? এর সঙ্গে কি আগামী লোকসভা নির্বাচনে আবার জিতে আসার লক্ষ্য নেই? দিলীপ বলেন, ‘‘জয় হচ্ছে পুরস্কার। আমি কাজ করে থাকলে তার পুরস্কার পেয়েই যাব। চাইতে হবে না। আর দেবী দুর্গার আরাধনার এই সময়ে মনে রাখতে হবে তিনিও জয় পেয়েছিলেন। অসুর বিনাশ করে জয়ের জন্যই তাঁকে আমরা স্মরণ করি, পূজা করি। তাঁর হাতের অস্ত্রসম্ভার জয়ের কথাই বলে। সেই সব অস্ত্র আবার বিভিন্ন দেবতা দিয়েছিলেন দেবীকে যুদ্ধে নামার জন্য।’’ দিলীপ নিজেও অনেক সময়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন। কখনও তরবারি, কখনও ত্রিশূল। কিন্তু এই পুজোয় দিলীপের অস্ত্র সমাজমাধ্যম।