বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বসে বৈঠক। ফাইল চিত্র
বিধানসভা নির্বাচনের ফল আশানুরূপ হয়নি। আর তার পর থেকেই স্বপ্নভঙ্গের কারণে ছন্নছাড়া দশা রাজ্য বিজেপি-র। কলকাতা পুরভোটেও দল ভাল ফল করতে পারেনি। সেই ফল ঘোষণার পরের দিনই নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ, বিক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ সবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বৈঠকে বসেন বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে ঠিক হয়েছে নতুন কমিটি রাজ্যে নতুন করে সংগঠন বিস্তারে উদ্যোগী হবে।
আসন্ন পুরনির্বাচনে লড়াইয়ের পাশাপাশি সময় থাকতে থাকতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে রাজ্যে সংগঠন মজবুত করতে হবে। তাই ভোটের ফল নিয়ে বেশি চিন্তিত না হয়ে রাজ্যে সাংগঠনিক শক্তি বাড়নোর দিকেই বেশি করে নজর দিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষেদের বৃহস্পতিবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় রাজ্য বিজেপি দফতরে কিছুটা উৎসবের পরিবেশ ছিল। বুধবার ঘোষিত কমিটিতে নতুন দায়িত্ব পাওয়া যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ, মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী তনুজা চক্রবর্তীকে বরণ করে নেওয়া পর্ব চলে। ঠিক সেই সময়েই দিল্লিতে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষের বাড়িতে বসে বৈঠক। বুধবারই ওই বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি চলে যান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। লোকসভার অধিবেশন চলায় দিল্লিতেই ছিলেন দিলীপ। এই তিনজনকে নিয়েই বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেন সন্তোষ।
জানা গিয়েছে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে বৈঠক। ওই বৈঠক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা বলেন, ‘‘নতুন কমিটি ঘোষণার পরের দিনই এই বৈঠক সাংগঠনিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে বিপর্যস্ত সংগঠন চাঙ্গা করাই যে এখন দলের প্রথম ও প্রধান কাজ তার প্রতিফলনই দেখা গিয়েছে নতুন কমিটিতে। পুরনোদের থেকে নতুনরা প্রাধান্য পেয়েছেন। সেই সঙ্গে কমিটিতে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের গড় বয়সও অনেক কম। এই কমিটি কী ভাবে কাজ করবে তা নিয়েই ছিল দিল্লির বৈঠক।’’ ওই নেতার থেকেই জানা গিয়েছে, সন্তোষ চান রাজ্যে বুথ স্তরে সংগঠনে জোর দেওয়া হোক। রাজ্য জুড়ে যে পুরসভা নির্বাচন হবে তাতে দল যাতে নতুন উদ্যম নিয়ে লড়াই করে সে বিষয়েও নজর দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে ফলাফল নিয়ে হতাশ না হয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই কর্মীদের নিয়মিত আন্দোলনের মধ্যে রাখতে হবে।
গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। সেই সময়ে হিসেবে দেখা গিয়েছিল রাজ্যে ১২১টি বিধানসভা এলাকায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। সেই হিসেবেই নবান্ন দখলের স্বপ্নও দেখে গেরুয়া শিবির কিন্তু বাস্তবে অনেকটা দূরেই থমকে যায় বিজেপি। এর পরে বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগ দিয়ে সাংসদ পদ ছেড়ে দেওয়ায় রাজ্যে বিজেপি-র শক্তিও কমেছে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি লোকসভা আসনে ভাল ফলের আশা থাকলেও দক্ষিণবঙ্গে অনেকটাই ধাক্কা খেতে পারে বিজেপি। সেই কারণে ২০২৪ সালে রাজ্যে ভাল ফল হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্টই চিন্তিত বিজেপি নেতৃত্ব। তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ক্ষমতায় আনতে গেলে বাংলায় ভাল ফল জরুরি বুঝেই এখন থেকে রাজ্যে সংগঠন শক্তিশালী করার দিকে ঝুঁকতে চাইছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। জানা গিয়েছে সেই কারণেই কোন পথে চলতে হবে তাও দিলীপ, সুকান্তদের নির্ধারণ করে দিয়েছেন সন্তোষ।