অসীম সরকার। —ফাইল চিত্র।
এক দিন আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয়কুমার মিশ্র (টেনি) এসে জানিয়েছেন, মতুয়া মহাসঙ্ঘের কার্ডই পরিচয়পত্র হিসাবে গণ্য হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই কথাকে কার্যত নস্যাৎ করে দিলেন বিজেপিরই হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার। যদিও ততক্ষণে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, মতুয়া মহাসঙ্ঘের দেওয়া কার্ড কি আধার, প্যান বা ভোটার কার্ডের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ? মতুয়াদের অনেকেরই যেখানে এই কার্ডগুলি রয়েছে, সে ক্ষেত্রে মতুয়া মহাসঙ্ঘের কার্ডের বাড়তি প্রয়োজনীতা কোথায়? একই সঙ্গে প্রশ্ন, তা হলে কি এই কার্ড নিয়ে বাংলাদেশি মতুয়ারাও ভারতের যত্রতত্র যেতে পারবেন?
তৃণমূলের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের আগে সিএএ কার্যকর করা যাবে না বুঝে নতুন কার্ডের তত্ত্ব খাড়া করতে চাইছে বিজেপি।
এই সূত্রেই সোমবার বাগদার হেলেঞ্চায় দলের উদ্বাস্তু সেলের এক কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসে অসীম সরকারের বক্তব্য, কোনও ধর্মীয় সংগঠনের কার্ড কখনও নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘‘মতুয়া কার্ড নিয়ে ভারতের যে কোনও জায়গায় নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করা যাবে— এ কথা যদি কেউ বলে থাকেন, তবে তিনি ভুল বলেছেন।’’ অসীমের ব্যাখ্যা, এই কার্ড হিন্দুত্বের প্রমাণ হতে পারে, কিন্তু নাগরিকত্ব প্রমাণ নয়। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও বাংলাদেশি মতুয়া কার্ড-সহ ধরা পড়লে জিআরপি তাঁকে কখনওই ছেড়ে দেবে না। এই মিথ্যে কথা আমি বলতে পারব না।’’
কার্যত একই কথা বলছেন বনগাঁয় মতুয়া ভক্ত শিবা মহলদাস। তিনি জানান, তাঁর ভোটার কার্ড, আধার কার্ড আছে। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল ২০১৯ সালে। তাতে নামধাম থেকে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সই, সব আছে। শিবা বলেন, ‘‘কার্ড করতে ৮৫ টাকা দিতে হয়েছিল। তবে কার্ড কোথাও দেখানোর প্রয়োজন পড়ে না।’’ অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের অফিস গিয়ে দেখা গেল, কয়েক জন সেখানে বসে কাজ করছেন। তাঁরা জানালেন, বছরভরই এই কার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু কী কাজে লাগে, তা হলফ করে বলতে
পারলেন না।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রবিবার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে এসে বলেছেন, মতুয়াদের নাকি আধার কার্ড নেই। সোমবার বহু মতুয়া ভক্তের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের এ দেশের যাবতীয় পরিচয়পত্র আছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণার পরে এ দিন মতুয়া-কার্ড করাতে বাড়তি কোনও ভিড়ও চোখে পড়েনি মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে।
কিন্তু যে সব মতুয়ার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড নেই, তাঁরা কি মহাসঙ্ঘ থেকে এই কার্ড পাবেন? শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘এ রাজ্যে প্রায় ২ কোটি মতুয়া ভোটারের মধ্যে প্রায় ৩৮ লক্ষের ভোটার বা আধার কার্ড নেই। তা-ও আমরা মহাসঙ্ঘ থেকে পরিচয়পত্র দিয়ে থাকি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই নথিপত্র নেওয়া হয় ঠিকানা খুঁজে পেতে বা তাঁদের শনাক্ত করতে।’’ মতুয়া ভক্তদের কেউ কেউ জানান, এই কার্ড দেখালে ট্রেনের টিকিট কাটতে হয় না। কেউ কেউ আবার তৃণমূলের মমতা ঠাকুরদের দেওয়া দ্বিতীয় একটি মতুয়া কার্ডের কথাও বলেন। তৃণমূল প্রভাবিত সেই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘মতুয়া কার্ডের মান্যতার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কেন লিখিত নির্দেশ বা সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করছেন না?’’ তাঁর দাবি, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে মতুয়াদের ফের ভাঁওতা দিতে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা এ সব কথা বলছেন। সদিচ্ছা থাকলে মতুয়াদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।’’ শান্তনু বলেন, ‘‘রাজ্য সিএএ চালু করতে দিচ্ছে না। তাই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে এই কার্ডকে বাড়তি মান্যতা দিতে হচ্ছে।’’
রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্র মতুয়াদের নাগরিকত্ব দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। আবার ২০১৯ সালে এই মতুয়া কার্ড চালু করার পরে তার কার্যকারিতাও স্পষ্ট নয়। তাই সব দিক রাখতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এমন ঘোষণা করে গেলেন। তবে তাঁর বিরোধিতা করছেন তাঁর দলেরই বিধায়ক। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস তাই বলেন, ‘‘অসীমবাবুর শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে।’’