বাঁ দিকে, গুলি করার সেই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি। ডান দিকে, পুলিশ ঠেকাচ্ছে সংঘর্ষরত বিজেপি এবং তৃণমূলের সদস্যদের। —নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির ডাকা বাংলা বন্ধের সকালে বিজেপিরই দুই নেতার গাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ করলেন অর্জুন সিংহ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভাটপাড়ায় উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। বুধবার দুপুরে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ঘটনাস্থলে মুখোমুখি হয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূল গোষ্ঠী। মাঝখানে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতা অর্জুন অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর দলের নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে অন্তত ছ’ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। তাতে জখম হয়েছেন তিন জন। এর মধ্যে দু’জন বিজেপি নেত। তৃতীয় জন গাড়ির চালক। অর্জুন বলেন, ‘‘চালকের কপাল ঘেঁষে বেরিয়েছে গুলি। এখনও রক্ত লেগে আছে গাড়িতে।’’ ওই ঘটনার নেপথ্যে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তারও অভিযোগ আনেন অর্জুন। বুধবার সকালে দুই বিজেপি নেতাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে তিনি বলেন, ‘‘বোমা-গুলি চলছে আর পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাসা দেখছে। আসলে পুলিশ তৃণমূলের তাঁবেদারি করছে।’’ এর পরই ভাটপাড়ার পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে।
বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটে সাড়ে ন’টা নাগাদ। আহতদের প্রথমে ব্যারাকপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ও পরে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি নেতা অর্জুন। তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোমা-গুলি চালানোর অভিযোগ তুলে জানান দুই বিজেপি নেতা রবি সিংহ এবং প্রিয়াঙ্কু পাণ্ডে তাঁর সঙ্গেই দেখা করতে আসছিলেন। অর্জুনের কথায়, ‘‘ওঁরা আমার বাড়ি আসছিলেন। ঘোষপাড়া মোড়ের কাছে সেই গাড়ি আটকানো হয়। তার পর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।’’
বাঁ দিকে উপরে, গুলি করার দৃশ্য। নীচে, হাসপাতালের শয্যায় চিকিৎসাধীন আহত বিজেপি নেতা। ডান দিকে, ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরে অর্জুন সিংহ। বুধবার। ভাটপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
অর্জুনের অভিযোগ, গুলি চালানোর পাশাপাশি বোমাবাজিও হয়েছে ওই দুই বিজেপি নেতার গাড়ির সামনে। অর্জুন বিশদে বলেন, ‘‘ছ’রাউন্ড গুলি চলেছে। সাত-আটটা বোমা পড়েছে। দেখুন গিয়ে কত রক্ত ঝরছে রবি সিংহের।’’ কিন্তু পুলিশ তা সত্ত্বেও কিছু করেনি বলে অভিযোগ ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদের। অর্জুনের কথায়, ‘‘গুলি চলেছে বোমা পড়েছে, আর পুলিশ এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাসা দেখছে।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পুলিশ কোথায় ছিল? জবাবে অর্জুন বলেন, ‘‘পুলিশ তৃণমূলের তাঁবেদারি করছে। আর কোথায় থাকবে! কত দিন আর এই দালালি চলবে? শেষ হয়ে গেছে সব।’’
আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান করেছিল ছাত্র সমাজ। সেই অভিযানে সরাসরি না যুক্ত থাকলেও বাইরে থেকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিল বিজেপি। মিছিলে আন্দোলনকারীদের ব্যারিকেড ভাঙতে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে দেখা যায়। রক্তাক্ত হন বহু পুলিশকর্মী। আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। কয়েক জায়গায় লাঠিচার্জও করা হয়। আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের সেই ‘অত্যাচার’-এর প্রতিবাদেই বুধবার ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধের ডাক দেয় বিজেপি। পাল্টা নবান্ন জানিয়ে দেয়, বন্ধ বেআইনি। বাংলার মানুষকে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে হবে। এই পরিস্থিতিেই বুধবার সকাল থেকে বন্ধ সফল করতে পথে নামে বিজেপি। বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মেট্রোরেলের প্রবেশপথের শাটার গায়ের জোরে বন্ধ করার চেষ্টা হয়। ব্যাহত করা হয় রেল পরিষেবা। বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষের খবরও আসে। এর মধ্যেই ভাটপড়ায় দুই বিজেপি নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় কিছু দুষ্কৃতী। অর্জুনের অভিযোগ, তারা তৃণমূলের আশ্রিত।