(বাঁ দিকে) দিলীপ ঘোষ। অনুপম হাজরা (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ সময় পরে রবিবার রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে যোগ দিলেন অনুপম হাজরা। রবিবার সেই বৈঠকের পরেই দিল্লি উড়ে গিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় কমিটিতে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি অনুপম। সোমবার সন্ধ্যায় বাংলার বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক রয়েছে। সেখানে থাকার জন্য অনুপমও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, দিলীপ ঘোষ সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ খোওয়ানোর পরে কি অনুপমের গুরুত্ববৃদ্ধি পেল রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় বিজেপিতে? এ নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে।
শনিবার বিজেপির সর্বভারতীয় কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপকে। এত দিন রাজ্যের প্রাক্তন সভাপতি হিসাবে নয়, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হিসাবে তিনি ডাক পেতেন রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন বৈঠকে। এ বার কেন্দ্রীয় কমিটির একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে সেই গুরুত্ব কি অনুপমকে দেওয়া হবে। রবিবার বিজেপির সল্টলেকের দফতরে হওয়া রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে অনুপমের উপস্থিতির পরেই এই প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপির নতুন এই দফতর তৈরি হওয়ার পরে অনুপমকে কখনও আসতে দেখা গিয়েছে কি না, সেটাই মনে করতে পারছেন না অনেকে। তবে রাজ্য বিজেপির অনেকে বলছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ সময় সে ভাবে দলের কাজে থাকতে পারেননি অনুপম। বিমানে ওঠা নিয়েও সমস্যা ছিল। ফলে বেশি সময়টাই দিল্লিতে কাটাতেন। এখন অনুপম কিছুটা সুস্থ হওয়ার কারণেই তিনি রবিবার কলকাতার বৈঠকে ছিলেন।
রবিবার সন্ধ্যায় হওয়া বিজেপির ওই বৈঠকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি ছিলেন বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত চার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালবীয় এবং আশা লাকড়া। সেখানে অনুপমের এই হাজিরা নিয়ে অন্য অন্য একটি মতও রয়েছে বিজেপির অন্দরে। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই অনুপমকে শীর্ষ স্তরের ওই বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছিল। সোমবার মোদীর বৈঠকেও সেই কারণেই ডাক পেয়েছেন অনুপম।
সংসদে অধিবেশন চলার সময়ে রাজ্যওয়াড়ি বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মোদী। তবে এ বারের বৈঠকের অন্য গুরুত্ব রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এ বার বৈঠকে ডাকা হয়েছে শরিক দলের সাংসদদেরও। সোমবার শুরু হওয়া এই বৈঠক আগামী ১১ অগস্ট পর্যন্ত ১১ দফায় হবে। লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ৪৩০ জন সাংসদের সঙ্গে কথা বলবেন মোদী। সোমবার বাংলার ১৬ জন সাংসদকে ওই বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার সমস্ত সাংসদ এবং উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি অংশের সাংসদদের ডাকা হয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, ব্রজ এবং কানপুর-বুন্দেলখণ্ড এলাকার সাংসদদেরই সোমবার ডাকা হয়েছে। অওয়ধ, কাশী এবং গোরক্ষপুর এলাকার সাংসদদের বৈঠক আগামী বুধবার।
সন্ধ্যা ৭টা থেকে বৈঠক শুরু হওয়ার কথা। সংসদ ভবনের এক নম্বর কমিটি রুমে হওয়া ওই বৈঠকে মোদী ছাড়াও থাকবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং পরিবহণ মন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ী। বৈঠক শেষে রয়েছে নৈশভোজও। সোমবার ৮৩ জন সাংসদকে নিয়ে এই বৈঠক সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। অনুপমকে হাজির থাকার জন্য চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ধর্মেন্দ্রই। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনের পরিকল্পনা, মোদী কোথায় কোথায় এখন প্রচারে যাবেন তা ঠিক করতেই সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক। সেখানে সাংসদ না হওয়া সত্ত্বেও অনুপম আমন্ত্রণ পাওয়ায় অনেকে মনে করছেন বাংলায় আগামী লোকসভা নির্বাচনে গুরুত্ব পেতে পারেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক অনুপম। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। প্রার্থীও করা হয়েছিল যাদবপুর আসনে। তবে তৃণমূলের মিমি চক্রবর্তীর কাছে পরাজিত হন।