ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এক গুরুত্বপূর্ণ দিনে হতে চলা বৈঠক নিয়ে নানা জল্পনা। ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার গোটা দেশের নজর থাকবে গুজরাতের দিকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর রাজ্যে বিজেপি কেমন ফল করে তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করবে জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ। ঠিক সেই দিন দুপুরেই বাংলার রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন শাহ। বিজেপি সূত্রে খবর, বুধবার দুপুরেই জরুরি ভিত্তিতে সেই বৈঠক ডাকা হয়েছে। সংসদ ভবনে শাহের দফতরে ওই বৈঠক হওয়ার কথা।
বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ গুজরাতে ভাল ফল। একই দিনে হিমাচল প্রদেশে কঠিন লড়াইয়ের ফল ঘোষণা হলেও বেশি নজর গুজরাতের দিকেই। যেই সময়ে শাহ সুকান্তের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তখন গুজরাতের ফল কী হতে চলেছে তা মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু সেই দিনেই এই বৈঠক কেন? রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ভাল ফল করাই শাহের লক্ষ্য। এত দিন গুজরাত নিয়ে তিনি খুবই ব্যস্ত ছিলেন। সেই পর্ব মেটার পরে একটুও সময় নষ্ট করতে চাইছেন না তিনি। সেই কারণেই বৃহস্পতিবার দুপুরেই সুকান্তকে ডেকেছেন।
সংসদে অধিবেশন চলায় বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত দিল্লিতেই রয়েছেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠকেও তিনি হাজির ছিলেন। সেখানে শাহ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। কিন্তু বুধবার বিকেলেই সুকান্তের কলকাতায় ফিরে আসার কথা ছিল। রাজ্য বিজেপির ঘোষণা মতো বুধবার বিকেলে কলকাতার একটি হাসপাতালে ডায়মন্ডহারবারে রাজনৈতিক সংঘর্ষে জখম বিজেপি কর্মীদের দেখতে যাওয়ার কথা। কিন্তু দুপুরের দিকে রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে জানা যায় সেই কর্মসূচি বাতিল হয়েছে। সুকান্ত কলকাতায় ফিরছেন না। এর পরেই জানা যায় শাহর তলবেই বুধবারের কর্মসূচি বাতিল করেছেন সুকান্ত। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে বৈঠকের সম্ভাবনার কথা স্বীকার করলেও কী বিষয়ে আলোচনা বা তিনি কী কী জানাবেন তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি সুকান্ত।
রাজ্য বিজেপি বেশ কিছু দিন ধরেই ডিসেম্বর মাসে তৃণমূল সরকারের ভবিষ্যৎ বদলে যাবে বলে দাবি করে আসছে। প্রথমে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সেই দাবি করলেও পরে তা শোনা যায় সুকান্তের গলাতেও। সেই বিষয়ে কি কিছু আলোচনা হবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের বৈঠকে? স্পষ্ট জবাব এড়িয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোন বিষয়ে কথা বলবেন তা তো আমার জানা নেই। তবে আমি যে যে বিষয়ে কথা বলতে চাই সেটা আমার জানা। আর সেগুলো একেবারেই দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’’
রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আদালতের রায়ে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই ও ইডিকে দিয়েছে আদালত। এ নিয়ে নিঃসন্দেহে কিছুটা হলেও চাপে রয়েছে শাসক তৃণমূল। সেই পরিস্থিতিতে বিজেপি শিবির অনেক দিন ধরেই নানা ভবিষ্যদ্বাণী করে এসেছে। তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নানা অভিযোগও রয়েছে দলের মধ্যে। সে সব নিয়েও শাহের সঙ্গে সুকান্তের কথা হবে কি না, সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা না থাকলেও গেরুয়া শিবিরে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে বৃহস্পতিবারের বৈঠক ঘিরে।
কয়েক মাস আগেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেয়, গুজরাত, হিমাচলের ভোট মিটে গেলে লোকসভা নির্বাচনের জন্য তিনটি রাজ্যে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। সেই তালিকায় তেলঙ্গানা, ওড়িশার সঙ্গে রয়েছে বাংলাও। এই তিন রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উত্তরপ্রদেশে সাফল্য দেখানো দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনশলকে। তিনি ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার হতে চলা শাহ-সুকান্ত বৈঠক ঘিরে নানা জল্পনা।
তবে বিজেপি সূত্রে খবর, সুকান্তের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের সাংগঠনিক হালহকিকতের খোঁজ নিতে পারেন শাহ। দলের বুথ স্তরের সংগঠন তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, কাদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে সেটাও আলোচনায় আসতে পারে। সেই সঙ্গে আলোচনায় আসতে পারে রাজ্য বিজেপির তোলা কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ। তৃণমূলও বার বার কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি কোনও কোনও প্রকল্পের টাকা দেওয়া শুরুও করেছে দিল্লি। এই ব্যাপারে কেন্দ্রের কী নীতি সেটাও সুকান্ত শাহের থেকে জানতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এখন দিল্লিতে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা। সব ঠিক থাকলে তাঁর দিল্লি সফরের মধ্য়েই শাহের সঙ্গে বাংলার রণনীতি বৈঠকে বসবেন সুকান্ত।