নরেন্দ্র মোদী।
প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। দ্রৌপদী মুর্মুর মনোনয়ন ঘোষণার দিন থেকেই এই প্রচারে নেমেছে বিজেপি। এ বার দ্রৌপদীর জয় নিশ্চিত হতেই নতুন প্রচার পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছে গেরুয়া শিবির। ঘটনাচক্রে, ২১ জুলাই যখন তৃণমূল ‘শহিদ দিবস’ পালন করবে, তখনই প্রকাশিত হবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফল। নির্বাচনের সূচি অনুযায়ী ওই দিন সকাল থেকে ভোটগণনা হওয়ার কথা। ফল ঘোষণা হয়ে গেলেই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে বিজয়মিছিল করবে বিজেপি। দলীয় বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। এর পরে নতুন রাষ্ট্রপতির শপথের দিনেও রাজ্য জুড়ে প্রচারে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে পদ্মশিবির।
মঙ্গলবার কলকাতায় দ্রৌপদীর উপস্থিতিতে বিজেপির সাংসদ এবং বিধায়করা মিলিত হন। সেই কর্মসূচির আগেই দলীয় বিধায়কদের নিয়ে এক বৈঠকে ওই দুই কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওই দু’দিনের প্রচারে সকল জনপ্রতিনিধি এবং নেতাকে অংশ নিতে বলা হলেও মূল দায়িত্ব দুই বিধায়ককে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন ফালাকাটার বিধায়ক তথা রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মন এবং হবিবপুরের বিধায়ক জুয়েল মুর্মু।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের রাইসিনা হিলসে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৪ জুলাই। বিজেপি মনে করছে, ২৮ জুলাই হতে পারে নতুন রাষ্ট্রপতির শপথগ্রহণ। সেই লক্ষ্যে ২১ এবং ২৮ জুলাই কর্মসূচি হবে বলে ঠিক হয়েছে। প্রথম দিন মূলত বিজয়মিছিল এবং দ্বিতীয় দিন রাজ্যের যত বেশি জায়গায় সম্ভব শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক মণ্ডল রয়েছে ১,২০০-র মতো। তার প্রতিটিতেই যাতে বড় স্ক্রিন লাগিয়ে রাষ্ট্রপতির শপথগ্রহণ সরাসরি সম্প্রচার করা যায়, তার ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য ইতিমধ্যেই জেলা ও মণ্ডল স্তরের নেতৃত্বকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। যে সব জায়গায় বিজেপির সাংসদ ও বিধায়ক রয়েছেন, সেখানে এই কর্মসূচিতে বেশি জোর দিতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বুথ স্তরের কর্মীদের প্রদর্শনের জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।
নরেন্দ্র মোদী-দ্রৌপদী মুর্মু।
কর্মসূচি সম্পর্কে বিশদে জানাতে না চাইলেও কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিধায়ক দীপক বলেন, ‘‘বিজেপি যা বলে সেটাই করে— এই কথাটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হবে আমাদের লক্ষ্য। একজন জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ যখন দেশের সর্বোচ্চ আসনে বসেন, তখন সেটা গণতন্ত্রের চূড়ান্ত সাফল্য। সেই সাফল্যের অংশ হিসেবেই রাজ্য জুড়ে আমাদের যেখানে যেমন শক্তি রয়েছে তেমন বিজয়মিছিল ও আনন্দোৎসব হবে।’’
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্রৌপদীকে রাষ্ট্রপতি পদে বসানোর কৃতিত্ব দাবি করে ইতিমধ্যেই পোস্টার, ব্যানার তৈরির কাজ শুরু করেছে দল। যেখানে একটাই দাবি করা হচ্ছে— বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে দেশের সব স্বপ্নপূরণ সম্ভব। সেই সুরেই যেমন আদিবাসী বিধায়ক জুয়েল বলেছেন, ‘‘মোদীজি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। বিজেপি থাকলে সবই সম্ভব। চিরকাল সমাজে পিছিয়ে-থাকা একজন মানুষ দেশের শীর্ষক্ষমতায় যেতে পারেন।’’
জুয়েলের আরও বক্তব্য, ‘‘এখন তিনি (দ্রৌপদী) রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন। ভারতীয় গণতন্ত্রের যে ভিত্তি, তাতে এমন মানুষদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন। কিন্তু সদিচ্ছা দরকার। সেটাই বিজেপি করে দেখাল। এই কথাটা নিয়েই আমরা আদিবাসী সমাজের কাছে যাব। সঙ্গে থাকবে দ্রৌপদী মুর্মু এবং নরেন্দ্র মোদীর ছবি। সেই ছবিই বলে দেবে, সাধারণ পরিবারের দুই সদস্যকে দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব দিয়েছে বিজেপি। এটাই আমাদের দলের বিশেষত্ব।’’
জুয়েল জানিয়েছেন, দ্রৌপদীর জীবন এবং বিজেপির আদর্শ পৌঁছে দিতে সাঁওতালি ভাষায় প্রচার পুস্তিকা তৈরি করছে বিজেপি। ‘অলচিকি’ হরফ সকলে পড়তে পারবেন না বলে সেই পুস্তিকা বাংলাতেই লেখা হচ্ছে। জুয়েলের আরও দাবি, বিজেপির উদ্যোগ ছাড়াই ২১ এবং ২৮ জুলাই রাজ্যের আদিবাসী সমাজ নিজেদের মতো করে উৎসব করবে।
প্রসঙ্গত, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ২১ এবং ২৮ জুলাই গোটা দেশেই এই কর্মসূচি নিচ্ছে বিজেপি। কারণ, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি দেশের আদিবাসীপ্রধান আসনগুলি তো বটেই, অন্যত্রও পিছিয়ে-থাকা সম্প্রদায়ের ভোট নিজেদের ঝুলিতে ভরতে চাইছে। সেই লক্ষ্যেই দ্রৌপদীকে প্রার্থী করা এবং তা নিয়ে প্রচার। এ বার ‘রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীকে’ নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রচারের পরিকল্পনাও তৈরি।