ছবি: সংগৃহীত।
বামফ্রন্টের প্রধান শরিক সিপিএম এবং তাদের রাজনৈতিক সহযাত্রী সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, কেউই কারও অবস্থান থেকে সরছে না। লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য যা বলছেন, নীতিগত ভাবে একমত হয়েও কৌশলের ভিন্নতার কথা বোঝাচ্ছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। আর এ সবের জেরে বাংলায় ভোটের আগে বামপন্থী মহলে জিইয়ে থাকছে বিভ্রান্তির বাতাবরণ।
বিতর্কের মাঝে তাঁদের দলীয় অবস্থান ফের স্পষ্ট করে ইয়েচুরি বলেছেন, দেশ ও রাজ্যে প্রধান শত্রু বিজেপিই। তাদের হারানোর লক্ষ্যেই তাঁরা যাবতীয় কৌশল নিচ্ছেন। তাঁর মতে, এমন কোনও কৌশল বামপন্থীদের নেওয়া উচিত নয়, যার জেরে বিজেপিকে পরাস্ত করার নীতিগত লক্ষ্যে পৌঁছনো কঠিন হয়ে যায়।
বিহারে নির্বাচনে সাফল্যের পরে লিবারেশনের দীপঙ্করবাবু বলছেন, বাংলায় বিজেপিকেই ‘পয়লা নম্বর শত্রু’ চিহ্নিত করে আক্রমণের বর্শামুখ নির্দিষ্ট করা উচিত বামেদের। বিজেপি ও তৃণমূলকে একাসনে বসানো ঠিক নয়, এমন মতই দিয়েছেন দীপঙ্করবাবু। নীতিগত ভাবে এই মতের সঙ্গে তাঁদের অবস্থানের কোনও ফারাক দেখছেন না ইয়েচুরি। তিনি জানাচ্ছেন, তাঁদের পার্টি কংগ্রেসে নির্ধারিত লাইন অনুযায়ী দেশে ও বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপিকে পরাস্ত করা, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার থেকে তাদের অপসারণ করাই প্রাথমিক কর্তব্য। বাংলায় দলের দৈনিক মুখপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক বুঝিয়েছেন, সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই রণকৌশল সাজাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘বহিরাগত’ তত্ত্বে সুর আরও চড়া তৃণমূলের, আক্রমণে চন্দ্রিমা
আরও পড়ুন: জল্পনা রেখে শুভেন্দু বললেন, মুখ্যমন্ত্রী তাড়াননি, তিনিও ছাড়েননি
ইয়েচুরিকে প্রশ্ন করা হয়, প্রধান শক্র কারা? অনেকেই বলছেন, বাংলায় সিপিএম তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার করছে বলে বিজেপির সুবিধা হচ্ছে। ইয়েচুরির জবাব, ‘‘সারা ভারতেই এবং বাংলায় প্রধান শত্রু বিজেপি। রণকৌশলের মুখ্য প্রশ্ন হল, এই শত্রুকে আমরা কী ভাবে হারাতে পারি? বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই না করলে, প্রচার না করলে শাসক-বিরোধী ভোটের একটাই রাস্তা খুলে যাবে। ভোট চলে যাবে বিজেপির কাছে। যে লক্ষ্যের জন্য আমরা কাজ করছি, সেই লক্ষ্যই পরাস্ত হবে। এমন কোনও কৌশল নিলে বিজেপিই লাভবান হবে।’’ ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, বাংলায় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে গভীর জন-অসন্তোষ রয়েছে। কেউ যদি বলেন বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল-সহ সকলকে নিয়ে চলতে হবে, তা হলে ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত হবে। প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট বিজেপির দিকে বেশি করে গিয়ে তাদের জয় নিশ্চিত করবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাঁরা বিজেপির বিপদকে খাটো করে দেখছেন।
ইয়েচুরির বক্তব্য, বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’পক্ষই চাইছে বাংলায় তাদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা হোক। দু’পক্ষই এই মেরুকরণে মদত দিচ্ছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন এই দ্বিমেরুর আখ্যান থেকে বেরিয়ে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব মানুষের সমর্থন এক জায়গায় আনার।