বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের প্রচারে এসে সুকান্ত মজুমদারকে চাকরিহারাদের পাশে থাকার নির্দেশ দেন নরেন্দ্র মোদী। ফাইল ছবি।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা হয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘যোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীরা যাতে কোনও ভাবেই বঞ্চিত না হন, সে বিষয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই নির্দেশ মতো এ বার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য পোর্টাল চালু করার কথা ঘোষণা করলেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য।
শমীক বলেন, ‘‘একটি বিশেষ পোর্টাল আমরা লঞ্চ করছি। আগামী বুধবার ৮ মে পোর্টালটি চালু করা হবে। যাঁদের চাকরি চলে গিয়েছে, তাঁরা সেই পোর্টালে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। আমরা প্রয়োজনে হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত গিয়ে যত প্রকার আইনি সহায়তা দেওয়া সম্ভব, তা দেব। মামলার খরচ বহন করা থেকে শুরু করে তাঁদের সব রকম সহযোগিতা আমাদের দলের পক্ষ থেকে করা হবে।’’
সম্প্রতি এসএসসির অধীনে থাকা ২৫,৭৫৩টি চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। এর পরে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ও রাজ্য সরকার। এখনও পর্যন্ত সে নির্দেশে স্থগিতাদেশ পায়নি রাজ্য। যদিও চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর লোকসভা নির্বাচনের আবহে আদালতের এই নির্দেশে তৃণমূল ‘চাপে’ রয়েছে। সেই ‘চাপ’ আরও বাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে তাদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি এর জন্য একটি আইনি পরামর্শদাতা দল এবং সমাজমাধ্যম দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্য নেতৃত্বকে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই মোদী বলেছিলেন, ‘‘যতই নির্বাচনের ব্যস্ততা থাকুক, রাজ্য নেতারা এই কাজ করবেন। যাঁর পাপ করেছেন তাঁদের সাজা হোক। কিন্তু অনেক সৎ রয়েছেন। যাঁদের সব ডিগ্রি ঠিকঠাক রয়েছে, তাঁদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি যে কাজ করবে, সেটা মোদীর গ্যারান্টি।’’ রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের হয়ে প্রচার করতে এসে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন মোদী। সেই সভায় হাজির ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
মঞ্চে বসা সুকান্তকে দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিন, ‘‘এখানে রাজ্য সভাপতি বসে রয়েছেন। তাঁকে আমি একটি পরামর্শ দিচ্ছি যে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অনেক নির্দোষও অসুবিধায় পড়েছেন। অনেকে সত্যি করেই শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার যোগ্য। বাকিদের পাপের কারণে এই নির্দোষরা সমস্যায় পড়েছেন। যাঁদের চাকরি গিয়েছে তাঁদের মধ্যে সৎ এবং যোগ্যদের যাতে আমরা সাহায্য করতে পারি, তা দেখতে রাজ্য নেতৃত্বকে বলেছি।’’ কী ভাবে সেই কাজ করতে হবে, তা-ও বলে দেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘আমি বাংলার বিজেপি নেতৃত্বকে বলেছি, রাজ্য স্তরে একটি আইনি সেল এবং একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বানাতে হবে। এর মাধ্যমে তাঁদের সুবিধা হবে যাঁরা সব কিছু ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতির কারণে চাকরি হারিয়েছেন। আমাদের দল তাঁদের আইনি সাহায্য করবে এবং ন্যায় দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করবে। আমরা সৎ মানুষদের পাশে থাকব।’’ সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই পোর্টাল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। আগামী বুধবার রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিনই পোর্টালের উদ্বোধন করা হবে।