ফাইল চিত্র।
সিবিআই-ইডি থেকে ‘বাঁচার’ জন্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া, নাকি ‘অভিযুক্ত’ তৃণমূল নেতাদের দলে নেওয়ার পিছনে বিজেপির আরও কুশলী কোনও ছক! রাজনৈতিক মহলে এটাই এখন বড় চর্চা।
প্রথমে মুকুল রায় এবং পরে শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে প্রশ্ন ওঠে, সিবিআইয়ের হাত থেকে ‘বাঁচতেই’ কি বিজেপির আশ্রয় বেছে নিয়েছেন তাঁরা? বস্তুত, তাঁদের বিজেপিতে যাওয়ার পিছনে ‘ভয়’ দেখানোর রাজনীতি কাজ করছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতৃত্বের।
সারদা এবং নারদ মামলায় নাম ওঠা মুকুলবাবু অবশ্য বার বার দাবি করেছেন, ‘‘আশ্রয়ের প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আমি নির্দোষ।’’ আর নারদ মামলায় অভিযুক্ত শোভন এ প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনও কথাই বলতে চাননি। তবে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়ে রেখেছেন, ‘‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকে রেয়াত করা হবে না। বিজেপি অপরাধীদের আশ্রয় দেয় না।’’
সিবিআই বার বার মুকুল ও শোভনকে ডাকায় প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি বিজেপিতে এসেও ‘রেহাই’ মিলছে না? পাশাপাশি বিজেপির অনেকের জিজ্ঞাসা, ‘অভিযুক্তদের’ দলে নিয়ে কী লাভ হল? তা ছাড়া, বিজেপিতে এসেও যদি তদন্তের গেরো থেকে ‘মুক্তি’ না-মেলে, তা হলে এর পরে আর তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে কেউ আসবেন কি? বুধবার দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে দল বাড়াতে হবে। শাসক দলও ভাঙতে হবে। সে ক্ষেত্রে সাদা-কালোর বিচার করা যাবে না।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, সেই সূত্রেই দলে এসেছেন মুকুল-শোভনরা। তাঁদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রাজ্য বিজেপির প্রয়োজন। কিন্তু তাই বলে, তাঁদের ‘আড়াল’ করারও চেষ্টা হবে না। তদন্তেও হস্তক্ষেপ করা হবে না। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাঁদের দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
তাতে বিজেপির লাভ কী হবে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা মুকুল-শোভনদের নেওয়ায় বিজেপির পুরোটাই লাভ। যদি তদন্তে তাঁরা বেকসুর হন, তা হলে তাঁদের অভিজ্ঞতা বিজেপি কাজে লাগাবে। অন্য দিকে অভিযোগ প্রমাণ হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিজেপি দেখিয়ে দিতে পারবে এই দলে দুর্নীতির স্থান নেই। তখন দুর্নীতির কালি প্রমাণিত হয়ে যাওয়ায় ওই দলত্যাগীদের পক্ষে আর তৃণমূলেও ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না। ফলে সব মিলিয়ে ‘লাভ’ হবে বিজেপিরই।
এই পরিস্থিতিতে এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘‘বিজেপিতে যাওয়ার জন্য এখনও কেউ ইট পেতে রাখলে, পরিস্থিতি কী হতে পারে, সেই বার্তা নিশ্চয় তাঁরা পাচ্ছেন।’’