গেরুয়া শিবিরে নানা প্রশ্ন। ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে চায়ের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর মিনিট চারেকের সাক্ষাতে কী নিয়ে কথা হয়েছিল তা কোনও পক্ষই প্রকাশ্যে বলেননি। একই সঙ্গে একটি প্রশ্ন উঠেছিল, শুভেন্দু কি মমতার ঘরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছিলেন? এই প্রশ্ন গেরুয়া শিবিরের অন্দরেও। এ বার সেই প্রশ্ন নিয়ে সরব দলের রাজ্য নেতা রাজকমল পাঠক। বিষয়টি স্পষ্ট করার দাবি জানিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষকে একটি চিঠিও লেখেন রাজকমল। সেই প্রসঙ্গে জবাবও দিয়েছেন শুভেন্দু। তবে তিনি যেমন রাজকমলকে আক্রমণ করেননি, তেমন বিষয়টা পরিষ্কারও করেননি।
গত বুধবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের শপথ বয়কট করেছিলেন শুভেন্দু। অভিযোগ ছিল, পূর্ণমন্ত্রীর সমান মর্যাদার পদাধিকারী হলেও তাঁর আসন তৃণমূলের সাংসদদের পিছনে দ্বিতীয় সারিতে রাখা হয়েছে। পরে আলাদা করে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শুভেন্দু। এর পরে শুক্রবার বিধানসভায় মমতা-শুভেন্দু সাক্ষাৎ হয়। সংবিধান দিবস উপলক্ষে বক্তৃতায় একে অপরকে রাজনৈতিক আক্রমণ করলেও এর মাঝেই অধিবেশনের বিরতির সময় মমতা শুভেন্দুকে নিজের ঘরে ডাকেন। তিন বিধায়ক অশোক লাহিড়ি, অগ্নিমিত্রা পাল এবং মনোজ টিগ্গাকে সঙ্গে নিয়ে মমতার ঘরে যান শুভেন্দু। সেই সময়ে মমতার পাশে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এর পরেই বিভিন্ন মহল দাবি করে, সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের মধ্যেই তাঁর এক সময়ের নেত্রী মমতাকে প্রণাম করেন শুভেন্দু।
সত্যিই প্রণাম করেছিলেন কি না তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত ওই সাক্ষাতের সময়ে উপস্থিতরা কেউই মুখ খোলেননি। তবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে গেরুয়া শিবিরে। সেই আলোচনাই এ বার পৌঁছল দিল্লির দরবারে। তিনি যে সন্তোষকে চিঠি লিখেছেন তা স্বীকার করে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সহ-সভাপতি রাজকমল আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘ওই দিনের সাক্ষাৎ নিয়ে দলের কর্মীদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে প্রশ্ন রয়েছে দলের আদি কর্মীদের মধ্যে। আমি তাই চেয়েছি, দলের পক্ষে একটা সাংবাদিক বৈঠক করে বিষয়টা স্পষ্ট করা হোক।’’ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ চাওয়া প্রসঙ্গে রাজকমল বলেন, ‘‘অল্প সময়ের সাক্ষাতে এত কিছু হয়েছে বলে আমিও মনে করি না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যখন, তখন শীর্ষ নেতৃত্বের উচিত কর্মীদের কাছে বিষয়টা স্পষ্ট করা।’’
রাজকমলের দাবি, এখন রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই চালাতে হচ্ছে নিচুস্তরের কর্মীদের। সেই সময়ে তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে রাজ্য দলের অন্যতম মুখের সাক্ষাৎ কেন এবং সেখানে কী হয়েছিল সেটা না জানা পর্যন্ত কর্মীদের মনের দ্বন্দ্ব কাটছে না। ওই সাক্ষাৎ নিয়ে তৈরি হওয়া নানা জল্পনা কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। সন্তোষকে রাজকমলের পাঠানো চিঠি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মঙ্গলবার বিধানসভায় সাংবাদিকদের শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেব না। তবে যিনি চিঠি লিখেছেন তিনি দলের বরিষ্ঠ (প্রবীণ) নেতা। আমি চাইব আমার মতো তিনিও এক দিন তৃণমূলের কোনও বরিষ্ঠ নেতাকে হারিয়ে বিধানসভায় আসুন।’’