বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে উত্তপ্ত আবহে বেঙ্গালুরুতে বিরোধী বৈঠক ঘিরে বাম ও কংগ্রেস শিবিরে অস্বস্তি ছিলই। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পঞ্চায়েতে হিংসার প্রসঙ্গ তুলে বাম ও কংগ্রেসকে খোঁচা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরও উৎসাহ নিয়ে আসরে নেমে পড়ল বিজেপি। তাদের লক্ষ্য, বাম ও কংগ্রেসের নিচু তলায় ‘বিভ্রান্তি’ বাড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা। বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোটের নামকরণ হয়ে গেলেও বাংলায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সিপিএম নেতৃত্বকে ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে, প্রাক্-নির্বাচনী কোনও সমঝোতা বিরোধীদের মধ্যে হচ্ছে না। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে তো নয়ই।
পঞ্চায়েত ভোটে শাসক তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। সেই তৃণমূলের সঙ্গেই সীতারাম ইয়েচুরি, রাহুল গান্ধীদের বৈঠকের দিকে আঙুল তুলে সোমবারই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ডাক দিয়েছিলেন, নিচু তলার কর্মীরা বাম ও কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে প্রয়োজনে আলাদা মঞ্চ গড়ে লড়াই করুন। শুভেন্দু মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গিয়েছিলেন নির্বাচনী হিংসায় আক্রান্ত বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়াতে। স্থানীয় বাসিন্দা এক সিপিএম কর্মীও সেখানে বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে কোনও যুক্তিতে কোনও সমঝোতাই তাঁরা মেনে নেবেন না। তারই জের টেনে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘এটা তো আমার বলার বিষয় নয়। সিপিএমের যে এজেন্ট তৃণমূলের কাছে মার খেয়েছেন, দলের হয়ে লড়তে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি ইয়েচুরিদের মনোভাব মেনে নেবেন?’’ বাংলায় যখন ‘প্যানিক’, বেঙ্গালুরুতে সেই সময়ে সিপিএম ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে ‘পিকনিক’ করতে গিয়েছেন বলেও কটাক্ষ করেছে বিজেপি।
সিপিএমের অবশ্য পাল্টা দাবি, বিরোধীদের জোট বাঁধতে দেখে ভয় পেয়েই বিজেপি এমন কৌশল নিয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘বিরোধীদের বৈঠকের দিনই ৩৮টা দলকে নিয়ে এনডিএ-র বৈঠক ডাকতে হল কেন? চ্যালেঞ্জ করতে পারি, বিজেপির নেতারাও ওই সবক’টা দলের নাম বলতে পারবেন না! এমন অনেক গোষ্ঠী ও নেতা ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করছে, যাদের বিজেপি আগে চোর ও দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আক্রমণ করেছে। এখন পরিস্থিতির চাপে তাদেরকেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরছে!’’ প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণের জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেছেন, ‘‘জাতীয় পরিস্থিতির নিরিখে বিরোধীদের বৈঠক হচ্ছে। মোদী রাজনৈতিক ধান্দাবাজি করে কংগ্রেসের নাম ব্যবহার করছেন। আদানিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে রেখেছেন। আর দুর্নীতির প্রশ্নে মোদী কংগ্রেসকে আক্রমণ করছেন!’’
সিপিএম, কংগ্রসের সুরেই মোদীর জবাবে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপির প্রতিক্রিয়ায় হতাশা আর আতঙ্ক স্পষ্ট। যাঁরা সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, তাঁরা নীতিজ্ঞান দিচ্ছেন!’’ তাঁর কথায়, ‘‘দুর্নীতিকে আশ্রয় দিয়ে অনৈতিক পথে প্রায় হাফ ডজন রাজ্যে সরকারি চালিয়েছে বা চালাচ্ছে, বিরোধী জোটের চেহারা দেখে তাঁরা উদ্বিগ্ন।’’
খড়গপুরে গিয়ে এ দিন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ কটাক্ষ করেছেন, “গত বার দেখেছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে ডেকে মাছ-ভাত খাইয়ে ব্রিগেডে স্লোগান তুলেছিলেন, ‘মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও’। তার পরেই এক ডজন আসন কমে গেল মমতার। অনেক দলের তো লোকসভায় প্রতিনিধিই নেই। সিপিএম এমন করতে করতে আজ গুটিয়ে গিয়েছে। আসলে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই!” তাঁর আরও দাবি, দুর্নীতিগ্রস্ত দলগুলি সিবিআই, ইডি-র বিরুদ্ধে হাওয়া তুলতে একজোট হয়েছে।
বিজেপির আক্রমণের পাশাপাশিই অন্য প্রশ্নও সামলাতে হচ্ছে সিপিএমকে। রাজ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ‘সংযুক্ত মোর্চা’ গডার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেনি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। পার্টি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজনৈতিক ফ্রন্ট না গড়ার। পটনার বৈঠকের পরেও সিপিএম নেতারা বলেছিলেন, কোনও ফ্রন্ট বা জোট হচ্ছে না। অথচ বেঙ্গালুরুতে ‘ইন্ডিয়া’ নামে বিরোধী জোট তৈরি হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের অবশ্য দাবি, ‘‘এটা কোনও নির্বাচনী জোট নয়। যে নীতি, আদর্শ ও ধারণার উপরে ভারত দাঁড়িয়ে, তাকে রক্ষা করার জন্য বিরোধী দলগুলি এক জায়গায় এসেছে। আরএসএস-বিজেপির পরিকল্পনা রুখতে তারা লড়াই করবে, প্রচার চালাবে।’’ দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরিও বেঙ্গালুরু পৌঁছেই ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূল, দুই শক্তির বিরুদ্ধেই বাম ও কংগ্রেসের লড়াই চলবে।