প্রতীকী ছবি
অযোধ্যায় ভূমিপুজো নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চরমে উঠেছে এ রাজ্যে। ওই দিন সম্পূর্ণ লকডাউন রাখায় রাজ্য সরকারের ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য বিজেপি। তৃণমূলের তরফে অবশ্য বিজেপির অভিযোগ খারিজ করে বলা হয়েছে, রাজ্যবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একাধিক বিজেপি অবশ্য হুমকি দিয়ে রেখেছে, লকাডউন না-মেনেই রামের পুজো হবে।
এ দিন উত্তর ২৪ পরগনায় একটি অনুষ্ঠানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘লকডাউন তো আরও একবার বদল করা যেত। যাঁরা বাধা দিচ্ছে তাঁদের নরকেও জায়গা হবে না। বাধা দিলে সংঘাত হবে।’’ দিলীপকে কটাক্ষ করে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘কে বলেছে যে বাধা দেওয়া হবে? প্রত্যেকেই ঘরে রামের পুজো করতে পারবেন। দিলীপবাবুরা ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।’’ সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, যে কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে তা এ রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তাই ওই দিন লকডাউন বিবেচনা করার দাবি অপ্রাসঙ্গিক। তা ছাড়া বিজেপির তরফে তেমন কোনও আবেদনও পায়নি রাজ্য প্রশাসন।
রাজ্য থেকে বিজেপি ও সহযোগী সংগঠনের যাঁরা অযোধ্যায় ভূমিপুজোয় গিয়েছেন, রাজ্যে ফিরলে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা চেয়েছেন যাঁরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। আজ অযোধ্যায় ভূমি পুজো শুরুর মুহূর্তে গৌড়বঙ্গের তিন জেলায় বিজেপি কর্মী ও বিভিন্ন গেরুয়া সংগঠনের সদস্যদের বাড়ি বাড়ি উলুধ্বনি দেওয়া, শাঁখ ও কাঁসর-ঘন্টা বাজানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিকেল ৫টা থেকে বাড়ি বাড়ি জ্বালানো হবে মাটির প্রদীপ। মন্দিরে রাম-নাম কীর্তন, যজ্ঞের পরিকল্পনা থাকলেও লকডাউনের জন্যই তা কাটছাঁট করা হয়েছে। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “দলগত কর্মসূচি নেই। সবাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শাঁখ বাজাবেন। সন্ধ্যেয় সবাই বাড়িতে ও জ্বালাবেন।”
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুরেও এ ভাবেই বাড়ি থেকে দিনটি পালনের আয়োজন সেরেছেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। পুরুলিয়ায় প্রতিটি বিজেপি অফিসেও শঙ্ঘধ্বনি করা হবে। জেলা বিজেপি সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘‘জেলায় যত রামমন্দির ও হনুমানজির মন্দির রয়েছে, বাসিন্দারা সেখানে পুজো, যজ্ঞ করলে বিজেপি কর্মীরা থাকবেন। দূরত্ব-বিধি মেনেই পুজোপাঠ করতে বলা হচ্ছে।’’ মুর্শিদাবাদে জেলা বিজেপি বহরমপুর শহরে তিনটি বড় পর্দায় অযোধ্যার অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নিলেও পরে লকডাউনের কারণে পিছু হটেছে।
খড়্গপুর-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় মন্দিরে গিয়ে পুজোপাঠ, যজ্ঞের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা। বিজেপির মেদিনীপুর সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি শমিত দাশ জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন মন্দিরে বিশেষ পুজো, হোমযজ্ঞ হবে। ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের ১০টি জায়গায় রামের প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে গৈরিক-পতাকা তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খড়্গপুরের তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ সরকার আবার সুর চড়িয়ে জানিয়েছেন, বিজেপি কর্মীরা মন্দিরে গেলে ও প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে তাঁরাও লকডাউনের মধ্যেই রামবন্দনা করবেন। কারণ রাম কারও একার নন।
পশ্চিম বর্ধমানে মঙ্গলবারই নানা জায়গায় পুজো-যজ্ঞ করেছে বিজেপি। দুর্গাপুরে বাইক মিছিল, কাঁকসায় পদযাত্রা হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, ‘‘বুধবার ‘লকডাউন’ মানার প্রশ্নই নেই। জেলার সর্বত্র পুজো-যজ্ঞ হবে।’’