BJP

BJP: ‘শান্তিতে থাকতে দাও’, মনোনয়ন তুলে বললেন বিজেপি প্রার্থী, ‘জোর করিনি’, বলল তৃণমূল

দফতর থেকে বেরিয়ে সন্দীপ দেখেন, তখনও দাঁড়িয়ে জনাতিনেক তৃণমূল নেতা। সন্দীপ আবেদন করেন, ‘‘মনোনয়নপত্র তুলে নিলাম। এ বার শান্তিতে থাকতে দাও। ’’

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

দু’দিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ লগ্নে মোবাইলটা ‘অন’ করেই কাল হল! আর ভোটে লড়া হল না হুগলির আরামবাগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সন্দীপ দাসের। তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে বিকেলে মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করলেন তিনি।

Advertisement

দফতর থেকে বেরিয়ে সন্দীপ দেখেন, তখনও দাঁড়িয়ে জনাতিনেক তৃণমূল নেতা। তাঁদের কাছে সন্দীপের আবেদন, ‘‘মনোনয়নপত্র তুলে নিলাম। এ বার শান্তিতে থাকতে দাও। গাড়ির ব্যবসাটা যেন চালাতে পারি।’’ চিন্ময় ঘোষ নামে এক তৃণমূল নেতার আশ্বাস, ‘‘কথা দিচ্ছি, নতুন কোনও ক্ষতি হবে না। তুমি দিদির উন্নয়নে ভরসা রাখছ। সরকারি বিভিন্ন সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে চেষ্টা করব।” প্রকাশ্যেই চলল কথোপকথন। তার পরে ওই তৃণমূল নেতা আনন্দবাজারের কাছে দাবি করেন, ‘‘আমরা কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ দিচ্ছি না। এলাকা উন্নয়নের কথা বলে, বিনয়ী হয়েই অনুরোধ করেছি।” কিন্তু সন্দীপের কথায় তো অন্য সুর!

আরামবাগ পুরসভার মোট ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। হামলা, গোলমালের আশঙ্কায় গত বৃহস্পতিবার স্ক্রুটিনি পর্বের পর বিকেল থেকেই ওই প্রার্থীরা ‘বেপাত্তা’ হয়ে যান। ঘাঁটি গাড়েন শহরের রবীন্দ্র পল্লির একটি গোপন ডেরায়। সকলেই মোবাইল ফোনও বন্ধ করে দেন। সেই দলে সন্দীপও ছিলেন।

Advertisement

শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা ছিল বেলা ৩টে পর্যন্ত। সন্দীপ জানান, আড়াইটে নাগাদ তিনি ফোন ‘অন’ করেন। বাড়িতে যোগাযোগ করতেই বাবার অসুস্থতার কথা জানতে পারেন। সে দিকেই রওনা হন। কিন্তু মাঝরাস্তায় পল্লিশ্রী থেকে তাঁকে মোটরবাইকে তুলে নেন তৃণমূল নেতারা, এমনটাই দাবি সন্দীপের। সন্দীপের অভিযোগ, ‘‘সম্ভবত মোবাইলের লোকেশন ধরেই ওরা আমার হদিশ পেয়ে যায়। বাইকে আসতে আসতে ওরা আমার গাড়ির ব্যবসা, বাবার দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। তাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলাম।’’

সন্দীপ প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করলেও বাকি বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পরেই প্রকাশ্যে আসেন। সন্ধ্যায় বিজেপির পক্ষ থেকে প্রার্থীদের দৌলতপুরে দলীয় কার্যালয়ে হাজির করিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়। সেখানে দলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুশান্ত বেরা এবং রাজ্য সম্পাদক তথা পুরশুড়া বিধায়ক বিমান ঘোষ জানান, দলের এক প্রার্থীকে তৃণমূল জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছে। ১৭ জন প্রার্থী নিয়েই দল লড়বে।

তবে, গোলমালের আশঙ্কায় এ বার আরামবাগে বামফ্রন্ট প্রার্থী-তালিকাই ঘোষণা করেনি। প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরেই তাঁদের নাম সামনে আসে। মাত্র একজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকে ২, ১১, ১২, ১৩, ১৭ এবং ১৮ নম্বরের প্রার্থীদের বাড়িতে চড়াও মনোনয়ন তুলতে হুমকি দিচ্ছে ওরা। থানা ও মহকুমায় কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।”

৮টি ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থীরাও অন্যত্র চলে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে দাবি দলের ব্লক সভাপতি রবীন্দ্রনাথ পালের। বিরোধীদের অভিযোগ মানেনি শাসক দল। শহর তৃণমূল সভাপতি তথা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী প্রদীপ সিংহরায়ের দাবি, ‘‘বিরোধীদের মনোয়ননপত্র তোলা‌তে দল সমর্থন করে না। আমরা কাজ করেছি। এ বার মানুষ যাঁকে চাইবেন, তিনি থাকবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement