অমিত মালব্য। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে নিজের বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ অমিত মালব্যকে বাংলার ময়দানে নামিয়ে দিলেন অমিত শাহ।
বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিতকে বঙ্গ বিজেপি-র সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে দলীয় স্তরে ওই নির্দেশ এসে পৌঁছেছে। ওই নির্দেশ দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। অমিতের নিয়োগের অর্থ, বাংলা দখলের লড়াইয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এবং সামগ্রিক ভাবে সংবাদমাধ্যমে আরও আক্রমণাত্মক এবং আগ্রাসী ভঙ্গিতে নামবে বিজেপি। কারণ, মালব্য-অমিতের দায়িত্ব সেটাই। বস্তুত, সারা ভারতেই তাঁর দায়িত্ব বিজেপি-র আইটি সেলকে চূড়ান্ত ‘সক্রিয়’ করে তোলা। বঙ্গ বিজেপি-র এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘অমিতের অধীনে গোটা দেশের সমস্ত রাজ্যেই আমাদের আইটি সেল সমীহ-জাগানো শক্তি হয়ে উঠেছে।’’
বিহারে সাফল্য এবং মধ্যপ্রদেশ-সহ বাকি রাজ্যের উপনির্বাচনে ভাল ফল করার পর বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের লক্ষ্য এখন বঙ্গবিজয়। আরও স্পষ্ট ভাবে বললে, নীলবাড়ি দখল। দলের নির্দেশ বলছে, বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গে সহ-পর্যবেক্ষক (বিজেপি-র দলীয় পরিভাষায় ‘সহ-প্রভারী’) হিসেবে কাজ করবেন অমিত এবং অরবিন্দ মেনন। অমিত এমনিতে সারা দেশেই বিজেপি-র আইটি সেল নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু এখন তাঁকে তার পাশাপাশিই বাংলাতেও অতিরিক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। দলীয় পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী— বিধানসভা ভোট পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় বাংলাতেই দিতে হবে।
বিজেপির জনসভায় সমর্থকদের উচ্ছ্বাস।
দায়িত্ব পাওয়ার পর অমিত টুইট করেছেন, ‘বিজেপি-র জন্য বাংলা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত…। নিজের সেরাটাই দেব’।
আরও পড়ুন: আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম কমবে না অন্তত তিন মাস
বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগে অমিত ছিলেন পেশাদার ব্যাঙ্কার। থাকেন উত্তরপ্রদেশে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে তিনি ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি বিজেপি-তে যোগ দেন। প্রথমে তাঁর কাজ ছিল মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় দলকে আরও ‘সক্রিয়’ করা। দলের একাংশের বক্তব্য, সেই কাজ তিনি এতটাই সফল ভাবে করেছিলেন যে, কালক্রমে তাঁকেই দলের আইটি সেলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তবে, এই প্রথম তাঁকে একটি রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করা হল। যা থেকে আরও একটি বার্তা দলীয় নেতৃত্ব দিতে চাইছেন বলেই বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করছেন। সেই বার্তাটি হল— দলের নেপথ্যে কাজ করলেও কাউকে যোগ্যতা বুঝে প্রথম সারিতে নিয়ে আসার বিষয়ে বিজেপি-র কোনও ছুতমার্গ নেই। সাধারণ ভাবে এর আগে দলের অন্দরে ধারণা ছিল, যাঁরা নেপথ্যচারী হয়ে কাজ করেন, তাঁদের কখনও মূলধারার রাজনীতিতে নিয়ে আসা হয় না। এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘অমিত মালব্যকে বাংলার সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে এনে দলের অন্দরেও এই বার্তা দেওয়া হল যে, নেপথ্যনায়কদের মূলস্রোতের প্রকাশ্য রাজনীতিতে নিয়ে আসার বিষয়ে কোনও বাধা নেই। যোগ্যতা থাকলে কেউ মূলধারার রাজনীতিতে আসতে পারবেন।’’ তবে পাশাপাশিই ওই নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই বার্তাটি দলের অন্দরের জন্য। আসল বার্তা হল, বিজেপি নীলবাড়ির লড়াইয়ে যে অপরিসীম গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বোঝানো। মাঠ-ময়দানের দৈনিক আন্দোলন-নির্ভর রাজনীতির পাশাপাশিই সোশ্যাল মিডিয়াতেও যে বিজেপি প্রতিপক্ষকে ছেড়ে কথা বলবে না, এই নিয়োগ তারই বার্তা বহন করছে। ওই নেতার কথায়, ‘‘নবান্ন দখলে আমার যে পুরোপুরি কমিটেড এবং সর্বস্তরেই তৈরি হয়ে নামতে চাই, এই নিয়োগে দলের ভিতরে-বাইরে সেই বার্তাও পাঠানো হল।’’
বঙ্গ সফরে এসে মধ্যাহ্নভোজ সারছেন অমিত শাহ।
বস্তুত, বিহার বিধানসভা নির্বাচন-পর্ব এবং অন্য রাজ্যের উপনির্বাচনের প্রস্তুতি দেখিয়েছে, কোভিড-অধ্যুষিত বিশ্বে অন্য অনেক কিছুর মতো নির্বাচনী প্রচারের কৌশলও বদলেছে। বড় জনসভা বা জমায়েত করা নিষিদ্ধ। সেখানেই সোশ্যাল মিডিয়া এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যমের মধ্যে দিয়ে নিজেদের প্রচার মানুষের আরও কাছে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ বেড়েছে। ওয়াকিবহালদের মতে, এই বিষয়ে বিজেপি গোটা দেশে সেরা! প্রসঙ্গত, বিহারে ভোটের আগেও অমিতকে ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সরাসরি দলের কোনও পদে তাঁকে রাখা হয়নি।
আরও পড়ুন: বাংলায় জঙ্গি নিশানায় একাধিক রাজনীতিক, জানাল আইবি
প্রসঙ্গত, বঙ্গ বিজেপি-তে কৈলাসের ‘উপদলীয় কাজকর্ম’ নিয়ে বিরক্ত ছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই তাঁকে দিল্লিতে ডেকে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, তখনকার মতো তিনি যেন বাংলার চেয়ে মধ্যপ্রদেশের উপনির্বাচনে বেশি মনোনিবেশ করেন। মধ্যপ্রদেশে উপনির্বাচন হয়ে গিয়েছে। কৈলাসও বুদ্ধিমানের মতো দলের ‘সঙ্কেত’ বুঝেছেন। তাই তাঁকে বাংলার পর্যবেক্ষকের পদে রেখে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কেউ আমাদের শক্তি পরীক্ষা করলে যথাযথ উত্তর পাবে: মোদী
বাংলায় অমিতকে নিয়োগের পাশাপাশিই ত্রিপুরাতেও একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেছে বিজেপি। রাজ্যের পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধরকে ত্রিপুরা থেকে সরিয়ে পাঠানো হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে। তাঁর সঙ্গে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বনিবনা হচ্ছিল না বলেই দলীয় সূত্রের খবর। জল্পনা ছিল, বাংলা ভাষায় দড় হওয়ায় ভোটের আগে সুনীলকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হতে পারে। তবে সুনীলকে যে দক্ষিণের কোনও রাজ্যে সরানো হতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল মাসদুয়েক আগে। যখন তিনি টুইট করে জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে তিনি তেলুগু ভাষা শিখছেন।
ছবি: বিজেপির বেঙ্গল টুইটার থেকে নেওয়া।