দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নজিরবিহীন অবনতির অভিযোগ তুলে রাজ্য জুড়ে এসপি অফিস ঘেরাওয়ের ডাক দিল বিজেপি। সোমবার রাজ্যের প্রতিটি জেলায় পুলিশ সুপারের অফিস ঘেরাও করা হবে। ঘোষণা করলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তৃণমূল নেতাদেরকে জনরোষের হাত থেকে রক্ষা করতে পুলিশ বার বার গুলি চালাচ্ছে— এমন গুরুতর অভিযোগ রবিবার তুলেছেন দিলীপ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে এ দিন সতর্কবার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তৃণমূলের ‘বোড়ে’ হবেন না, সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে বার্তা তাঁর।
শনিবার বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে তৃণমূলের মিছিলকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। তৃণমূলের মিছিল ঘিরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া শুরু করতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ২ বিজেপি সমর্থক-সহ মোট ৩ জন গুলিবিদ্ধ হন। একজন আবার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ গুলি চালিয়েছে এবং গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া সত্ত্বেও গুলি চালিয়েছে।
পুলিশ অবশ্য গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেনি। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শ্যামল সাঁতরাও বলেন যে, পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। কিন্তু বিজেপি অভিযোগে অনড় থেকে ইতিমধ্যেই পাত্রসায়রের ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে। ভাটপাড়া নিয়েও সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে বিজেপি। রাজ্যের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তীব্র নিন্দা করে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ।
আরও পড়ুন : রাজস্থানে রাম কথার অনুষ্ঠানে ঝড়ে ভাঙল প্যান্ডেল, মৃত অন্তত ১৪
আরও পড়ুন : মুখ্যমন্ত্রীর কাটমানি নির্দেশ থেকে গ্রিভান্স সেল, পিছনে কি প্রশান্ত কিশোরের কৌশল?
সোমবার দুপুর ১২টা থেকে রাজ্যের সবক’টি পুলিশ জেলায় বিজেপি পথে নামবে বলে দিলীপ ঘোষ এক সাংবাদিক সম্মেলনে রবিবার জানান। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে প্রায় রোজ রাজ্যের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে যে ভাবে রাজনৈতিক হিংসা এবং খুন-জখমের খবর আসছে,সে প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের তীব্র নিন্দা করেন দিলীপ। গত কয়েক দিনে ভাটপাড়া, আমডাঙা, পাত্রসায়র, খণ্ডঘোষ, নরেন্দ্রপুর, চোপড়া থেকে রাজনৈতিক হিংসার খবর যে রকম উপর্যুপরি আসতে শুরু করেছে, তার প্রেক্ষিতে পথে নামা ছাড়া আর কোনও রাস্তা বিজেপির সামনে খোলা নেই বলে রাজ্য বিজেপির সভাপতি মন্তব্য করেছেন।
দিলীপ এ দিন বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা এখন যে রকম, তা শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, সারা দেশের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি কর্মীদের রক্ষা করার জন্য রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনও পথ আমাদের সামনে খোলা নেই।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে এ দিন দিলীপ ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কথা বলছেন। দিলীপের কথায়, ‘‘কাটমানির কথা মুখ্যমন্ত্রী এত দিন জানতেন না, এমন তো নয়। উনি সব জানতেন। এত দিনে স্বীকার করছেন।’’ দিলীপ আরও বলেন, যে কাটমানির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুলেছেন, তার ভাগ মুখ্যমন্ত্রী নিজেও পান। কাটমানি ফেরতের দাবিতে অন্য তৃণমূল নেতাদের বাড়ি ঘেরাও না করে আগে কালীঘাট ঘেরাও করা উচিত বলেও দিলীপ এ দিন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী টাকা ফেরাতে বলেছেন। যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের টাকা দিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন টাকা ফেরত চেয়ে।’’ পুলিশকে আক্রমণ করে দিলীপ বলেন, ‘‘তৃণমূলের অত্যাচারী, ভ্রষ্টাচারী নেতাদের পুলিশ সুরক্ষা দিচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের রাগ গিয়ে পড়ছে পুলিশের উপরে। আর পুলিশ গুলি চালিয়ে দিচ্ছে। অথবা পুলিশের সামনে দুষ্কৃতীরা গুলি চালাচ্ছে, পুলিশ কিছু বলছে না।’’
এ রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তৃণমূল ‘বোড়ে’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে দিলীপ এ দিন মন্তব্য করেন। তাঁরা বার্তা, ‘‘সংখ্যালঘু সমাজের চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে তাঁরা যেন ব্যবহৃত না হন। না হলে কিন্তু তাঁদের সুরক্ষা নিয়েই সংশয় দেখা দেবে।’’