নিহত কালাচাঁদ কর্মকার (বাঁ দিকে)। বিজেপি নেতার বাড়ির সামনে ভিড় স্থানীয়দের।—নিজস্ব চিত্র।
কোচবিহারে বিজেপি-র বুথ কমিটির এক সম্পাদককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল। তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের। তৃণমূল যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একটি কালীপুজোকে কেন্দ্র করে দুই ক্লাবের গন্ডগোলে কালাচাঁদ কর্মকার নামের ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাদের। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখনও পর্যন্ত এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তুফানগঞ্জের নাককাটিগাছ পঞ্চায়েতের চামটা গ্রামের কর্মকারপাড়ায় বুধবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বে এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বরং মৃতদেহ নিয়ে ৩১নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন নিহতের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে বলে দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত কালাচাঁদ কর্মকারকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় একদল দুষ্কৃতী। তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব এবং নিহতের পরিবারের লোকজন। তুফানগঞ্জের বিজেপি-র যুব মোর্চার সদস্য প্রসেনজিৎ বসাক বলেন, ‘‘উদ্দেশপ্রণোদিত ভাবে, রীতিমতো পরিকল্পনা করে কালাচাঁদবাবুকে খুন করেছে তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এই ধরনের ঘটনায় প্রত্যেক বার পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা পাড়ায় কার সঙ্গে ঝামেলা ছিল, তা কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্র কষা হয়।’’
আরও পড়ুন: অন্য দলে যান বা নতুন দল গড়ুন, সিব্বলকে হুঁশিয়ারি অধীরের
বিধানসভা নির্বাচনের আগে এমন ঘঠনা আরও ঘটতে পারে বলে বিজেপি কর্মীদের আশঙ্কা। জেলা বিজেপি সভানেত্রী মালতি রাভা বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে আমাদের। গ্রামাঞ্চলে বিজেপি কর্মীরা একেবারেই সুরক্ষিত নন। এখানে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। নাককাটিগাছ এলাকায় রীতিমতো চক্রান্ত করেই আমাদের দলের কর্মীকে খুন করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব আমরা।’’ বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টা তুফানগঞ্জ বন্ধের ডাক দিয়েছে জেলা বিজেপি।
তবে তৃণমূল এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের কোনও কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। কালীপুজো নিয়ে দুই ক্লাবের সংঘর্ষেই খুন হয়েছেন ওই ব্যক্তি।’’
আরও পড়ুন: ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত ভারভারা রাওকে হাসপাতালে ভর্তি করার নির্দেশ
পুলিশের দাবি, কালীপুজোকে কেন্দ্র করে বহু দিন ধরেই ওই এলাকায় দুই ক্লাবের মধ্যে রেষারেষি রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দুই ক্লাবেরই মূর্তি বিসর্জন ছিল। সেই নিয়ে নতুন করে গন্ডগোল দানা বাঁধে। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি বেঁধে যায়। তাতেই আঘাত পান কালাচাঁদ। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তুফানগঞ্জ থানা। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কমল বর্মণ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার কে কান্নান বলেন, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। কালীপুজোকে কেন্দ্র করে দুই ক্লাবের মধ্যে ঝামেলা বাধে। সেই সময় ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে আঘাত পান কালাচাঁদ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।’’