Mamata Banerjee

BJP: ‘সমালোচনা নয়, গুন্ডামি’

রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ ও ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের সাফল্যের খতিয়ান ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ছোট ও মাঝারি শিল্পে দেশের সবথেকে বেশি বিনিয়োগ এ রাজ্যেই হয়েছে। দেউচা পাঁচামিতে লক্ষ লক্ষ চাকরি হবে। দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ০৭:১০
Share:

ফাইল চিত্র।

বিজেপি হট্টগোল শুরু করার পরে উত্তপ্ত বিধানসভায় সোমবার ভাষণ না পড়েই ফিরে যেতে চাইছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বিজেপি বুধবারও হট্টগোল করল। তবে তারই মধ্যে ৪০ মিনিট বক্তৃতা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিলেন, “এই মাটিতে আঁচড়াতে এসে লাভ হবে না। এখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে।” একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করলেন, নন্দীগ্রামে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল।

Advertisement

বিধানসভায় এ দিন রাজ্যপালের ভাষণের উপর বক্তৃতা করার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। তার আগে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির দুই বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সেই সাসপেনশন তোলার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ করেন। তখন শুভেন্দুকে ওই অনুরোধ লিখিত ভাবে জানাতে বলেন স্পিকার। প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়কেরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা একটানা ‘মোদী-মোদী’ এবং ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। তার মধ্যেই বক্তৃতা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু বিজেপি গুন্ডামি (হুলিগানিজ়ম) করছে। বিজেপি অশান্তি ছড়ায় আর আমরা শান্তি চাই। ওরা গণতন্ত্র মানে না, দাঙ্গা করে।” এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “এখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে। আমাদের এত সহজে ঝোঁকানো যাবে না। আমরা আন্দোলন করে আসা লোক।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বলতে নিজের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এর আগেও বহু বার নিজেকে বাংলার বাঘিনী এবং পাহারাদার বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি দাঙ্গা করতে চাইলেও তিনি থাকতে তা হতে দেবেন না।

নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বিধানসভায় অভিযোগ করেন, “নন্দীগ্রামে সমঝোতা করেছিল। আমাকে বাইকে করে যেতে হয়েছিল। আন্দোলন করা আমাকে শেখাবেন না। সেই সময় আমাকে লক্ষ্য করে গুলিও চালানো হয়েছিল। যাঁরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন, তাঁদের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।” যদিও কার সঙ্গে কার সমঝোতা, তা স্পষ্ট করেননি মমতা।

Advertisement

বিজেপি বিধায়কদের সাসপেন্ড করার প্রতিবাদের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, কিছু দিন আগে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদদেরও সাসপেন্ড করা হয়েছিল। পাশাপাশি, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের তুলনা টেনে মমতা বলেন, “আমরা মানবিক, ওরা দানবিক। আমরা চাই শিল্প, ওরা চায় দুর্ভিক্ষ। বাংলার কৃষকরা আমাদের গর্ব। আমরা কৃষকদের আন্দোলনের পাশে থাকি। গাড়ি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করি না। বিজেপি কোভিডে মানুষ মারা গেলে গঙ্গায় ফেলে দেয়, এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে গুলি চালায়, সিবিআই এবং এনআইএ-কে ব্যবহার করে। বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দিতে চায়।” শুভেন্দুর নাম না করে তাঁর উদ্দেশে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, “যারা নিজেদের এলাকায় জিততে পারে না, তারা এখানে এসে বড় বড় কথা বলছে, চিৎকার করছে।” পুরভোটে শুভেন্দুর ওয়ার্ডে বিজেপি হেরেছে। সেই বিষয়েই ইঙ্গিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ ও ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের সাফল্যের খতিয়ান ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ছোট ও মাঝারি শিল্পে দেশের সবথেকে বেশি বিনিয়োগ এ রাজ্যেই হয়েছে। দেউচা পাঁচামিতে লক্ষ লক্ষ চাকরি হবে। দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। জয় বাংলার জয়। বাংলা উন্নয়নের শিখরে এবং শান্তিতে এগিয়ে।” মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিজেপি দেশের সর্বনাশ করছে এবং এ রাজ্যকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করছে। মমতার কথায়, “আমপানে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজ্যে। কেন্দ্রীয় সরকার এক টাকাও দেয়নি। লজ্জা করে না?” বিজেপির প্রতি মমতার আরও কটাক্ষ, “তোমরা গোল্লা। বিশৃঙ্খল দল। যারা অব কি বার ২০০ পার বলেছিল, তারা পগার পার। বিজেপির এ বার বিশ্রাম নেওয়ার সময় এসেছে।”

মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হাত ছুড়ে, আঙুল দেখিয়ে যে ভাবে আক্রমণ করেছেন, তাতে মনে হয়েছে, তাঁর মধ্যে ভয় কাজ করছে। উন্নয়নের থেকে বেশি সময় সিবিআই, এনআইএ নিয়ে কথা বলেছেন। তাতে মনে হয়েছে, তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকজন, রাজনৈতিক সহকর্মীদের নিয়ে চিন্তিত। ওঁর এই ভয় আমরা উপভোগ করেছি।” কেন্দ্রের আমপানের টাকা না দেওয়া সংক্রান্ত মমতার অভিযোগের জবাবে শুভেন্দু বলেন, “কেন্দ্র টাকা না দিলে সেই টাকা খরচ নিয়ে সিএজির অডিট হচ্ছে কেন? আসলে সিএজির তদন্ত শেষ হওয়ার পথে। তাই উনি ভয় পাচ্ছেন।” আর নন্দীগ্রামে তাঁকে নিশানা করে গুলি চালানোর যে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, তা নিয়ে শুভেন্দুর কটাক্ষ, “আমার কাছে পরাজয়ের অব্যক্ত যন্ত্রণা থেকে এ সব বলছেন মুখ্যমন্ত্রী।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement