রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে কুড়মি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে কুড়মি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন বিরবাহা। অভিযোগ, শুক্রবার অভিষেকের কনভয় ঝাড়গ্রামের গড়শালবনিতে ঢুকতেই কয়েকটি গাড়িতে হামলা হয়। তার মধ্যে বিরবাহারও গাড়ি ছিল। গাড়ির ‘উইন্ড স্ক্রিন’ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বিরবাহা জানিয়েছেন, কুড়মি-হামলার ঘটনায় তিনিও জখম হয়েছেন। গোটা বিষয়টি তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাবেন।
শুক্রবার ঝাড়গ্রাম শহরে ‘নবজোয়ার কর্মসূচি’র ‘রোড শো’ শেষ করে লোধাশুলি হয়ে অভিষেকের কনভয় শালবনির দিকে যাচ্ছিল। সেই যাত্রাপথেই ঘটনাটি ঘটে। ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের দু’ধারে তখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কুড়মি আন্দোলনকারীরা। অভিযোগ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে ‘চোর চোর’ বলে স্লোগানও দেওয়া হয়। এর পর তৃণমূলের শীর্ষ নেতার কনভয়ের শেষে থাকা মন্ত্রী বিরবাহার গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইটও। তাতে মন্ত্রীর গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে গিয়েছে। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, দলীয় কর্মীদের বাঁশ, লাঠি দিয়ে মারা হয়। ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিরবাহা বলেন, ‘‘এ ভাবে হামলা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ইটের আঘাতে গাড়ির কাচ ভেঙেছে। আমারও চোট লেগেছে।’’ মন্ত্রী জানান, শাসক তৃণমূলের ১২-১৩ জন কর্মী হামলার ঘটনায় জখম হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গজাশিমুলে জনসংযোগ কর্মসূচির ‘অধিবেশন’ পর্বের পর তিনিও চিকিৎসককে দেখাবেন।
তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেকের কনভয়ের ১২-১৫টি গাড়ির পরে মন্ত্রী বিরবাহার গাড়ি ছিল। সেটির পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। হামলার ঘটনার পর বিরবাহা বলেন, ‘‘আমিও নিজে আদিবাসী সমাজের মানুষ। কিন্তু এ ভাবে আন্দোলন হয় নাকি! আমরাও আন্দোলন করেছি। কিন্তু এটা অসভ্যতা। এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’ এই ঘটনার জন্য সিপিএম এবং বিজেপিকেও দুষেছেন তিনি। বিরবাহা বলেছেন, ‘‘কুড়মিরা যে আন্দোলন করছেন, তৃণমূল তো কোনও দিন তার বিরোধিতা করেনি। তা হলে কেন তৃণমূলের কর্মসূচিতে হামলা চালানো হবে? এটা কোনও জাতিগত আন্দোলন হতে পারে না। এটার সঙ্গে বিজেপি আর সিপিএমও জড়িত। নোংরামি ছাড়া কিছুই নয়।’’
কুড়মি-হামলার পর আরও কিছু দূর গাড়ি করে গিয়ে নেমে পড়েছিলেন অভিষেক। তার পর প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে লোধাশুলিতে ঢোকেন তিনি। সেখানে গিয়ে আবার গাড়িতে উঠে গজাশিমুল এলাকায় দলীয় কর্মসূচির উদ্দেশে রওনা দেন তৃণমূল নেতা। গাড়িতে ওঠার সময় অভিষেক জানান, তিনি এই ঘটনার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন।
এর পর গজাশিমুলে নবজোয়ারের অধিবেশনে গিয়ে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, ‘‘আপনারা কেউ উত্তেজিত হবেন না। যারা করেছে, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করেছি। প্রশাসনও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবে। ভদ্রতার খাতিরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেছি। খেলা তুমি শুরু করেছো, আমি শেষ করব।’’ অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘কুড়মিরা তো তফসিলি জনজাতির স্বীকৃতির জন্য লড়ছেন। তার পরেও তাঁরা কী করে জনজাতি মহিলার উপর হামলা চালালেন? এ সব হতাশা থেকে করা হচ্ছে।’’
তৃণমূল সাংসদের দাবি, ‘‘আজকের ঘটনার পিছনে কারা আছে, তা সাংবাদিক বৈঠক করে জানাক কুড়মি সংগঠন। ৪৮ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। যদি সেই সময়ের মধ্যে না করেন, তা হলে ধরে নেব, আপনারাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’’ কুড়মি আন্দোলনকে কটাক্ষ করে অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, ‘‘জয় শ্রীরাম শ্লোগান কেন কুড়মি আন্দোলনে?’’