এই পুজো বাংলার প্রথম বারোয়ারি পুজো বলে পরিচিত। নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুজো দেখতে জমিদার বাড়িতে গিয়েছিলেন গ্রামের মেয়েরা। দালানেই ঢুকতে দেয়নি পেয়াদা। অপমানিত হয়ে গ্রামে ফিরে মেয়েরা ঠিক করেন, তাঁরাই গ্রামে পুজো করবেন। কিন্তু আর দুর্গাপুজো করা সম্ভব না হওয়ায় দুর্গারই আর এক রূপ বিন্ধ্যবাসিনীর পুজো শুরু করে হুগলির গুপ্তিপাড়া। এ বার ওই পুজোয় দেবীর আরাধনায় চড়ানো হল চার হাজার মালসা ভোগ।
গুপ্তিপাড়া হুগলির প্রাচীন জনপদ। গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের এই জনপদে এক সময় ছিল সেনদের জমিদারি। তখনও বাংলায় বারোয়ারি পুজো শুরু হয়নি। দুর্গাপুজো হত জমিদার বা রাজবাড়িতে। সেনদের জমিদার-দালানেও হত দুর্গাপুজো। ওই দালান থেকেই ফিরে আসতে হয়েছিল গুপ্তিপাড়ার মহিলাদের। তাঁরাই গ্রামে ফিরে এসে জগদ্ধাত্রীকে বিন্ধ্যবাসিনী রূপে পুজো করা শুরু করেন। তখন বঙ্গাব্দ ১১৬৮। এই পুজোই আজ বাংলার প্রথম বারোয়ারি পুজো বলে পরিচিত।
জনশ্রুতি, শুরুতে অর্থের অভাবে অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরি করে শুরু হয়েছিল ওই পুজো। পরে তা ঘিরে গ্রামের সবার উন্মাদনা দেখে পাকা দালান তৈরি করে দেয় সেন পরিবার। যা আজও 'বিন্ধ্যবাসিনী তলা' নামে পরিচিত। নিয়ম নিষ্ঠা মেনে আজও নবমী তিথিতে হয় সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজো। দেবীকে দেওয়া হয় মালসা ভোগ।
পুজোর সহ-সভাপতি নিরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ বার চার হাজার মালসা ভোগ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা পুজো দিতে আসেন বা ঠাকুর দেখেত আসেন, তাঁদের প্রত্যেকের জন্য ভোগের ব্যবস্থা থাকে। ভোগে থাকে পাঁচ রকম ভাজা, খিচুড়ি, লাবরা, মাছ, পোলাও ও পায়েস।’’
গুপ্তিপাড়ার বাসিন্দা সুব্রত মণ্ডলের কথায়, ‘‘রথ বিখ্যাত গুপ্তিপাড়ায়। রথের দিন আর বিন্ধ্যবাসিনী পুজোর দিন খুব আনন্দ হয় এখানে। করোনার মধ্যে এই পুজো জৌলুস হারালেও আশা করি আগামী বছর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আরও কয়েকটি জগদ্ধাত্রী পুজো হয় গুপ্তিপাড়ায়। কিন্তু বিন্ধ্যবাসিনীর বিসর্জনের পরই হয় সেই সব প্রতিমা বিসর্জন।’’