মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
ঘটনা ১৮ বছর আগের। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের যুব তৃণমূল নেতা বিকাশ বসুর খুনের ‘বিচার’ হয়নি বলে এ বার মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সিপিএমকে ‘ম্যানেজ’ করে বিকাশের খুনে অভিযুক্তেরা পার পেয়ে গিয়েছিল। সিপিএম অবশ্য পাল্টা মনে করিয়ে দিয়েছে, সেই খুনের ঘটনায় যাদের নাম জড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম অর্জুন সিংহ সেই সময় থেকে টানা তৃণমূলেরই বিধায়ক ছিলেন!
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী এ বার বিজেপির অর্জুনের কাছে হারের পরে ওই অঞ্চলের বিধানসভা কেন্দ্র ধরে ধরে কর্মসূচি করতে চাইছেন মমতা। বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে কাঁচরাপাড়ার মিলন নগরে শুক্রবার তিনি গিয়েছিলেন দলের কর্মিসভা করতে। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিকাশ ছিল আমার ভাল নেতা, ওর মৃত্যুর বিচার হয়নি। তখন সিপিএমের সরকার। তড়িৎ তোপদারকে (ব্যারাকপুরের তৎকালীন সাংসদ) ম্যানেজ করে সব বেঁচে গেল!’’ অর্জুন বা কারও নাম না করেই মমতার আরও মন্তব্য, ‘‘সিপিএমে হাতেখড়ি, তৃণমূলে সুড়সুড়ি, এখন বিজেপিতে গড়াগড়ি। আর এর পরে?’’ তৃণমূল জনতা চিৎকার করে বলে, ‘গলায় দড়ি’! মমতা যোগ করেন, ‘‘আমার মুখ দিয়ে গলায় দড়ি বলা ঠিক নয়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য শুনে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎবাবু বলছেন, ‘‘বিপদে পড়ে এখন ‘এসকেপ রুট’ খুঁজছেন! সেই ঘটনার পরে উনিই তো অর্জুনকে ভাটপাড়ায় নিজের দলের টিকিট দিয়েছিলেন। আবার বিকাশের স্ত্রী মঞ্জু যাতে বেশি দূর না এগোন, তার জন্য তাঁকেও নোয়াপাড়া থেকে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। আমি সাংসদ থাকার সময়ে এলাকা উন্নয়নের তহবিল নিয়ে বৈঠকে অর্জুন ও মঞ্জু, দুই তৃণমূল বিধায়কই আসত। এখন এ সব বলে নিজের গা বাঁচাতে চাইছেন!’’ আর বিজেপি সাংসদ অর্জুনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সেই ঘটনার মামলা চলার সময়েই উনি আমাকে বিধানসভার টিকিট দিয়েছিলেন। এখন মনে পড়ল? তার পরে তো নিম্ন আদালত, হাইকোর্টে মামলা চলেছিল।’’ অর্জুনের আরও মন্তব্য, ‘‘পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বভাব। অর্জুনকে ভয় দেখানো যাবে না। ওঁর সরকারও আর ৬ মাসের বেশি টিকবে না!’’
কাঁচরাপাড়ায় গিয়ে মুকুল রায়েরও নাম না করে মমতা বলেছেন, ‘‘আমার ভুল সব চেয়ে বেশি। দলের অনেকে সতর্ক করেছিল, দিদি ও গদ্দার। কিন্তু আমি শুনিনি। বিশ্বাস করেছিলাম।’’ প্রয়াত মৃণাল সিংহ রায়ের (আবু) মৃত্যুর প্রসঙ্গ এনেও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘কাঁচরাপাড়ার নেতা ছিল আবু। ‘মেন্টর’ (মুকুলের গুরু) মারা গেল দুর্ঘটনায়। সেটা দুর্ঘটনা নাকি ঘটানো হয়েছিল? আবুর মেয়ের কিন্তু অভিযোগ আছে।’’