ফাইল চিত্র।
তিনি জিতলেন। শুধু জেতাই নয়, নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙলেন। ভবানীপুর উপনির্বাচনে ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটে জয়ী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে জয়ের হ্যাটট্রিকও করলেন তিনি। এক ভোট, অনেক রেকর্ড। এক দিকে যেমন মমতা নিজের জয়ের রেকর্ড ভেঙেছেন, তেমনই এই কেন্দ্রের সব ওয়ার্ডেই তৃণমূল জিতেছে বলে দাবি করেছেন মমতা। আর এর জন্য ভবানীপুরের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতাও স্বীকার করেছেন তিনি।
মমতা জিতবেন এটা নিশ্চিত ছিলই। কিন্তু কত ব্যবধানে তিনি জিতবেন সে দিকেই নজর ছিল সব রাজনৈতিক দলগুলির। তাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই গোটা দেশের নজর ছিল ভবানীপুর কেন্দ্রের দিকে। গণনার শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন মমতা। গণনা যত এগিয়েছে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের থেকে তাঁর ভোটের ব্যবধান তত বেড়েছে। ২১ রাউন্ড শেষে বিশাল ভোটে জয় পেলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৮৫ হাজার ২৬৩। প্রাপ্ত ভোটের হার ৭১.৯১ শতাংশ। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিজেপি-র প্রিয়ঙ্কা পেয়েছেন ২৬ হাজার ৪২৮ ভোট। তাঁর প্রাপ্ত ভোটের হার ২২.২৯ শতাংশ।
ভবানীপুর উপনির্বাচনে মমতার প্রাপ্ত ভোট ৭১ শতাংশের বেশি। অন্য দিকে, প্রিয়ঙ্কা পেয়েছেন ২২ শতাংশের বেশি ভোট। এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্রে ৫৭.৭১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সেখানে বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ পেয়েছিলেন ৩৫.১৬ শতাংশ ভোট।
ভবানীপুরে মমতা পেয়েছেন মোট ৮৫ হাজার ২৬৩ ভোট। প্রিয়ঙ্কা ২৬ হাজার ৪২৮ এবং শ্রীজীব পেয়েছেন ৪ হাজার ২২৬ ভোট।
ভবানীপুরে মোট ৭০২টি পোস্টাল ব্যালটের মধ্যে মমতা ৫৫৪, প্রিয়ঙ্কা ১০৪ এবং শ্রীজীব ২৫টি ভোট পেয়েছেন।
এক দুই তিন, মানুষকে ধন্যবাদ দিন: মমতা
মমতা বলেন, “সারা বাংলা খুব আঘাত পেয়েছিল যখন সব ভোটে জিতেও একটায় জিততে পারিনি। সেটা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। সেটা নিয়ে এখন কিছু বলছি না। অনেক চক্রান্ত চলেছিল। সব চক্রান্ত জব্দ করে দিয়েছে বাংলার মানুষ, ভবানীপুরের মানুষ। ভবানীপুরের মানুষের কাছে আমি চিরঋণী।”
কোনও ওয়ার্ডে আমরা হারিনি। এই প্রথম এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ২০১৬-তে যখন লড়েছি তখন একটা দুটো ওয়ার্ডে ভোট কম পেয়েছিলাম। কিন্তু এ বার সব ওয়ার্ডে জিতেছে দল। জায়গাটা ছোট্ট, কিন্তু তার বৃত্তটা অনেক বড়। আজ মন ভরে গিয়েছে, ভবানীপুরের মানুষ দেখিয়ে দিল। সারা বাংলা ভবানীপুরের দিকে তাকিয়ে ছিল: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটে বিজেপি-কে হারিয়ে ভবানীপুরে জয়ের হ্যাটট্রিক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০ রাউন্ডে মমতার জয়ের ব্যবধান ৫৬ হাজার ৫৮৮। এই রাউন্ডে মমতা পেয়েছেন ৮২ হাজার ৬৮ ভোট। প্রিয়ঙ্কা পেয়েছেন ২৫ হাজার ৪৮০ ভোট।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “ ভবানীপুর মমতা নিজের এলাকা হলেও মাত্র ৫৩ শতাংশ মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ভবানীপুরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস বলতে যা বোঝায় সেটাই নেই।” তিনি আরও বলেন, “রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ভবানীপুরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতবেন এটার জন্য কোনও ভবিষ্যদ্বাণী দরকার হয় না। কোনও বিজ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ভবানীপুরে তাঁর প্রতি মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস তার কোনও প্রতিফলন আমি দেখিনি।”
১৯ রাউন্ড শেষে মমতার ব্যবধান ৫২ হাজার ১৭। এই রাউন্ডে তৃণমূল পেয়েছে ৭৬ হাজার ৪১৩, বিজেপি পেয়েছে ২৪ হাজার ৩৯৬ ভোট।
১৮ রাউন্ড শেষে মমতার ভোটের ব্যবধান ৪৮ হাজার ৭৮২। এই রাউন্ডে তৃণমূল পেয়েছে ৭২ হাজার ৫৬, বিজেপি পেয়েছে ২৩ হাজার ২৭৪ ভোট।
যদুবাবুর বাজারে মিষ্টি বিতরণ কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের। নিজস্ব চিত্র।
১৭ রাউন্ড শেষে ভবানীপুরে মমতার ভোটের ব্যবধান ৪৫ হাজার ৭৩৮। এই রাউন্ডে মমতা পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৬২০ ভোট। প্রিয়ঙ্কা পেয়েছেন ২১ হাজার ৮৮২ ভোট।
১৬ রাউন্ড শেষে মমতার ভোটের ব্যবধান ৪২ হাজার ২৯২। তৃণমূল পেয়েছে ৬২ হাজার ৭৬০। বিজেপি পেয়েছে ২০ হাজার ৪৬৮।
১৫ রাউন্ড শেষে মমতার ভোটের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াল ৩৯ হাজার ৬৫৭। এই রাউন্ডে তিনি পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৫০৩ এবং প্রিয়ঙ্কা পেয়েছেন ১৮ হাজার ৮৪৬ ভোট।
ভবানীপুরে। নিজস্ব চিত্র।
১৩ রাউন্ড শেষে মমতার ভোটের ব্যবধান ৩৬ হাজার ৪৫৭। এই রাউন্ডে তিনি পেয়েছেন ৫২ হাজার ২৭৮ এবং প্রিয়ঙ্কা পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮২১ ভোট।
ফিরহাদ হাকিম।
যত গণনা এগোচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটের ব্যবধান ততই বাড়ছে। সবে দ্বাদশ রাউন্ড শেষ হয়েছে। তাতেই ৩৪ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বার বারই বলেছেন ভবানীপুরে মমতা ৫০-৮০ হাজার ভোটে জিতবেন। রবিবার সকালেও একই দাবি করেছেন তিনি। ফিরহাদ বলেন, “বিজেপি-র ঘোষণা করে দেওয়া উচিত ছিল যে, আমরা এই লড়াইয়ে আর নেই।” তিনি আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুরের মানুষের হৃদয়ে রয়েছেন। যত গণনা বাড়বে ফল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় দেখতে পারবেন। ৫০-৮০ হাজারে ভোটের ব্যবধানে জিতবেন মমতা।”
ফিরহাদের কথায়, “এর পর দিল্লিতে যেতে হবে। ভারতের রাজনীতিতে যেতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিজেপিকে সরাতে হবে। মমতাকে বাংলায় নয়, দেশে অগ্রণী ভূমিকায় দেখতে চান মানুষ। ২০২৪-এ মোদী সরকার দেশের ক্ষমতা থেকে সরলে আসল জয় সে দিন আসবে।”
দ্বাদশ রাউন্ড শেষে ৩৪ হাজার ৯৭০ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই রাউন্ডে তিনি ভোট পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৮১৩টি। এবং বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮৪৩ ভোট।
বিজয় উৎসব করা যাবে না রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানাল নির্বাচন কমিশন। কড়া নজর ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র দিকেও।