ভবানীপুরে উপনির্বাচনের প্রচারসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
কয়েক দিন আগে তিনি বলেছিলেন ভবানীপুর থেকে দেশ দেখবেন। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “ভবানীপুরে যে খেলা হবে, তা শেষ হবে ভারত জয়ে।” রবিবার ভবানীপুর কেন্দ্রে তাঁর নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, “একটা খেলা (বিধানসভা) হয়ে গিয়েছে। বাংলার খেলা হয়ে গিয়েছে। এই খেলাটা শেষ হবে ভারতে।”
এ দিন প্রচার সভাগুলিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন। তাঁর দাবি, “কেরল, অসমে আমরা (তৃণমূল) পা রেখেছি। এমন কোনও রাজ্য নেই, যেখান থেকে মানুষ আমাদের কাছে আসেননি। তাঁরা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাই। লক্ষ লক্ষ চিঠি পেয়েছি। তাঁদের বক্তব্য, দেশ কা নেতা ক্যায়সা হো, মমতাদি য্যায়সা হো।”
ভবানীপুরের এই নির্বাচনকে তৃণমূল যে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে, এ দিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা, অভিষেক দু’জনেই। এই সূত্রে মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক প্রায় একই সুরে কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধীদের থেকে নিজেদের আলাদা করে দেখিয়েছেন। যদুবাবুর বাজার লাগোয়া অঞ্চলের প্রথম সভায় মমতা বলেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের বোঝাপড়া আছে। তাই কংগ্রেস ছেড়েছি। এখনও আছে। বিজেপির সঙ্গেও বোঝাপড়া আছে। জগাই, মাধাই, গদাই। এখানেও নির্বাচনে অনেক কাণ্ড করবে।” তাঁর আগে অভিষেকের মন্তব্য, “কংগ্রেস, সিপিএম, শরদ পওয়ারের এনসিপি, বিএসপির মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলও সর্বভারতীয় দল। এদের মধ্যে বশ্যতা স্বীকার না করে, মেরুদণ্ড বিক্রি না করে, আত্মসমর্পণ না করে একমাত্র লড়াই করছে তৃণমূল।”
ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। তবে গত কয়েক দিনের প্রচারে লাগাতার কংগ্রেসের সমালোচনায় সরব মমতা ও অভিষেক। শুধু তা-ই নয়, লোকসভা ভোটের আগে তাঁরা কংগ্রেসের সম্ভাবনা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন। তৃণমূলকে খোঁচা দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পাল্টা প্রশ্ন, “রাহুল গাঁধী বা কংগ্রেস সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম করে সমালোচনা করছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বা তৃণমূল নেতারা তো তাঁর নামই মুখে আনেন না। মোদীর নাম ধরে আক্রমণ করতে কোথায় বাধা তৃণমূল নেত্রীর?”
তৃণমূলের আক্রমণের জবাবে অধীর আরও বলেন, “ব্যাং-কে ফুলিয়ে হাতি করা হলে সে তো আর হাতি হয় না, ফেটে যায়! কুয়োর ব্যাং তৃণমূল এখন প্রশান্ত কিশোরের পাম্পে হাতি হতে চাইছে। এর পরেই পতন শুরু হবে।” সেই সঙ্গেই ২০১১ সালের জোটের কথা মনে করিয়ে তাঁর বক্তব্য, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থেকে তিনি এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়াই সম্ভব হত না, যদি সনিয়া গাঁধী জোট করে সাহায্য না করতেন। বাংলায় এক সাংসদ থেকে তৃণমূল ১৯-এ পৌঁছতে পেরেছিল কংগ্রেসের সহায়তায়। এখন সেই মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়ে দিচ্ছেন, কী ভাবে বিশ্বাসঘাতকতার ভাইরাস ছড়াতে হয়।”
আজ, সোমবার ভবানীপুর-সহ রাজ্যের তিন বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচার শেষ হচ্ছে। তার আগে এ দিন জোড়া সভাতে হাজির ছিলেন তৃণমূলের একাধিক নেতা ও মন্ত্রী।