( বাঁ দিক থেকে) মুকেশ অম্বানী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিরঞ্জন হীরানন্দানি। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
আগামী মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে সপ্তম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস)। চলবে বুধবার পর্যন্ত। রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রিলায়্যান্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মুকেশ অম্বানী সম্মেলনে থাকার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পাকা কথা দিয়েছেন। একই সঙ্গে শিল্প সম্মেলনে থাকছেন হীরানন্দানি গ্রুপের বর্ষীয়ান কর্ণধার নিরঞ্জন হীরানন্দানি। পাশাপাশি আইটিসি গ্রুপের সঞ্জীব পুরী, আরপি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, চ্যাটার্জি গ্রুপের চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, জেএসডব্লিউ গ্রুপের সজ্জন জিন্দল-সহ দেশের প্রথম সারির একঝাঁক শিল্পপতিও হাজির থাকবেন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে। উল্লেখ্য, এঁদের অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পেন এবং দুবাই সফরে উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, সপ্তম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান হবে আলিপুরের ধন ধান্য প্রেক্ষাগৃহে। সূত্রের খবর, সম্মেলনের অতিথিদের গঙ্গাবিহার এবং আলিপুর জেল মিউজ়িয়াম ঘুরিয়ে দেখানোর প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের একটি মহলের। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
প্রসঙ্গত, বাণিজ্য সম্মেলনে কৌতূহল সবচেয়ে বেশি যে দু’জনকে নিয়ে, তাঁরা হলেন মুকেশ অম্বানী এবং নিরঞ্জন হীরানন্দানি। আগামী লোকসভা ভোটের অব্যবহিত আগে মমতার আহূত বাণিজ্য সম্মেলনে অম্বানী গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশের উপস্থিতিকে অনেকেই রাজনৈতিক দিক দিয়েও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন। তৃণমূলের এক হিতৈষীর কথায়, ‘‘বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মুকেশের উপস্থিতি বাণিজ্যিক দিক থেকে তো বটেই, রাজনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।’’
কৌতূহলের কেন্দ্রে থাকবেন নিরঞ্জনও। তাঁর পুত্র দর্শনের থেকে ‘উপহার ও ঘুষ’ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে। মহুয়ার বিরুদ্ধে তদন্তের পর সংসদের এথিক্স কমিটি তাঁর সাংসদ পদ খারিজের জন্য সুপারিশ পাঠিয়েছে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে। উল্লেখ্য, দুবাইয়ে গত সেপ্টেম্বরে মমতা যে শিল্প সম্মেলন করেছিলেন, সেখানে হাজির ছিলেন নিরঞ্জনের পুত্র দর্শন। মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দর্শনের থেকে ‘উপঢৌকন’ নিয়ে সংসদে আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। নবান্ন সূত্রের খবর, আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরও থাকার কথা বিজিবিএসে। তবে গৌতম আদানি নিজে থাকবেন কি না, সে ব্যাপারে শনিবার পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। গত বার সম্মেলনে আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হাজির ছিলেন। তা ছাড়া ইংল্যান্ড, ইতালি-সহ বেশ কিছু দেশের শিল্পপতি ও বণিকসভার প্রতিনিধিরাও হাজির হবেন দু’দিনের শিল্প সম্মেলনে।
২০২১ সালে তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পরেই মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ বার তাঁর লক্ষ্য শিল্পায়ন। শুধু বৃহৎ ও ভারী শিল্প নয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পর্যটন, বস্ত্রবয়ন, চলচ্চিত্র— বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলায় অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। সেপ্টেম্বরে মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং দুবাইয়ের শিল্প সম্মেলনে এই সব ক্ষেত্রের কথাই সে দেশের শিল্পপতি এবং বণিকসভার সদস্যদের কাছে তুলে ধরা হয়েছিল। রাজ্যের প্রথম সারির শিল্পপতিরাও আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, বাংলায় শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে গত ১২ বছরে। যার নেপথ্যে রয়েছে মমতার নেতৃত্ব এবং সদিচ্ছা। তখন থেকেই চলতি বছরের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের নান্দীমুখ করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।