ফাইল চিত্র।
সরকারের দাবি, প্রাথমিক ভাবে প্রায় ৩,৪২,৩৭৫ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব এসেছে রাজ্যের সদ্যসমাপ্ত শিল্প সম্মেলনে (বিজিবিএস)। তবে শুধু প্রস্তাবেই সীমাবদ্ধ না থেকে এ বার তা বাস্তবায়িত করার উপরে জোর দেওয়া হল নবান্নের শীর্ষমহল থেকে, জানিয়েছে প্রশাসনিক সূত্র। ওই সূত্রের দাবি, প্রস্তাব দেওয়া শিল্পপতিরা যাতে তাঁদের বিনিয়োগ বাস্তবায়িত করার সুযোগ পান, সেই পরিবেশ-পরিকাঠামো দ্রুত নিশ্চিত করার বার্তা যাচ্ছে জেলায় জেলায়।
নবান্ন সূত্র জানাচ্ছে, তাজপুর-রঘুনাথপুর, ডানকুনি-কল্যাণী এবং ডানকুনি-ঝাড়গ্রামের পণ্য করিডর পরিকাঠামোকেই আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু করার পরিকল্পনা চলছে। কারণ, তা ছড়িয়ে ১১টি জেলা জুড়ে। প্রায় ৬০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ করিডরের মধ্যে থাকবে পুরুলিয়া, দুই বর্ধমান, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া, দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম। তাজপুরে সমুদ্র বন্দর তৈরির যে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে রাজ্য, সেই পরিকাঠামো সম্পূর্ণ হলে এই করিডরের গুরুত্ব আরও বাড়বে। তার উপরে রেল-বিমান-জলপথ যোগাযোগ, উন্নত রাজ্য সড়ক এবং জাতীয় সড়ক ১৯, ৬, ৪১ এবং ৩৪ এর মধ্যে থাকায়, সেটি শিল্পমহলকে বাড়তি উৎসাহ জোগাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।
তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরেই শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানকে সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে জায়গা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করেছেন, গত পাঁচটি বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে ১২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি লগ্নি প্রস্তাব এসেছে এবং সেগুলি রূপায়ণের কাজ চলছে। যদিও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। তবে প্রশাসনিক শিবির জানাচ্ছে, গত ১০ বছর ধরে শিল্পবান্ধব যে পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হচ্ছিল, তা অনেক দূর এগিয়েছে। ফলে শিল্পের এখনকার চাহিদা এবং মনোভাব বুঝেই পণ্য করিডরের মতো পৃথক পরিকাঠামোয় নজর দিচ্ছে রাজ্য।
প্রশাসনিক মহলের একাংশ মনে করাচ্ছে, এতদিন রাজ্যে যে জোর কার্যত ছোট-ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের উপরে ছিল, তার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে বড় শিল্পও। পাশাপাশি, বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন ধরনের শিল্প-সম্ভাবনাকে একত্রিত করার চেষ্টা চলছে। ফলে ওই পণ্য করিডর-পরিকাঠামোর আওতায় ধাতু-পণ্য ও ফ্যাব্রিকেশন, বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ, বস্ত্র, রাসায়নিক, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, খনিজ, প্লাস্টিক ও রবারের সামগ্রী এবং পণ্য মজুত ও পরিবহণের মতো ক্ষেত্রের উপরে নজর রাখা হচ্ছে। শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বিনিয়োগকারীদের কাছে জমি সমস্যা হবে না। সরকারি সূত্রের দাবি, প্রস্তাবিত করিডর পরিকাঠামোয় (জোন অব ইনফ্লুয়েন্স) প্রায় ৩১ হাজার একর জমি রয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, যে ধরনের বিনিয়োগ-প্রস্তাব এসেছে, তাতে এই ক্ষেত্রগুলি সমৃদ্ধ হতে পারে।
সম্মেলনেই মুখ্যমন্ত্রী জেলাভিত্তিক বণিকসভাগুলিকে তাঁদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জেলাশাসকদের ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার বার্তা দেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টায় শিল্পের চাহিদা বুঝে কারিগরি প্রশিক্ষণেও জোর দেওয়া হচ্ছে।