রাজ্যে করোনা-পরীক্ষা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। ফাইল ছবি।
বর্ষশেষের উৎসবের মধ্যেই রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে কোভিডের দৈনিক সংক্রমণ। সোমবার সংক্রমণের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪০০-র কম। বুধবার তা পৌঁছে গিয়েছে ১,১০০-র দোরগোড়ায়। এর মধ্যেই উদ্বেগ বাড়িয়ে হাজির করোনাভাইরাসের ওমিক্রন রূপ। বিদেশযাত্রার ইতিহাস নেই রাজ্যে এ রকম ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হয়েছেন ওমিক্রনে। এই পরিস্থিতিতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। আগামী দিনে যদি দৈনিক সংক্রমণ মাত্রাছাড়া হয়, তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে রাজ্যে, তা হলে কী ভাবে পরিস্থিতির সামাল দেওয়া হবে তা নিয়ে সতর্ক স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা।
এ বছর মে মাসে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় রাজ্যে কোভিড সংক্রমণ ২০ হাজার ছাড়িয়েছিল। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকেই তা এক হাজারের নীচে নামে। তার পর বেশ কয়েক মাস ধরে কমতে কমতে ডিসেম্বরে ৫০০-র ঘরে নেমেছিল রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণ। গত দু’দিনে তা লাফিয়ে বেড়ে এক হাজার ছাড়াতেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কপালে। এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে ওমিক্রন। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট ১১ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত। তাঁদের অনেকেরই সাম্প্রতিক কালে বিদেশযাত্রার ইতিহাস নেই। আরও ৭০০ জন কোভিড আক্রান্তের নমুনা কল্যাণীতে পাঠানো হয়েছে জিন পরীক্ষার জন্য। স্থানীয় স্তরে ওমিক্রন ছড়াতে শুরু করলে তা তৃতীয় ঢেউকে ত্বরান্বিত করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতেই বুধবার বৈঠকে বসেছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, তৃতীয় ঢেউ এলে কী ভাবে মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেই বৈঠকে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে দৈনিক ২০ হাজার সংক্রমণের সাক্ষীও থেকেছে রাজ্য। তৃতীয় ঢেউয়ে দ্বিতীয় ঢেউয়ের থেকেও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা ধরে নিয়েই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। দৈনিক ৩০ হাজার ব্যক্তি আক্রান্ত হলে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা নিয়েও চলেছে আলোচনা। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ এবং অক্সিজেন মজুত রাখার নির্দেশও হাসপাতালগুলিকে দেওয়া হয়েছে। মে-এপ্রিল মাস পর্যন্ত হাসপাতালগুলিকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি হাসপাতালের এক কর্তা।
আগামী কয়েক দিনে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কতটা বাড়তে পারে তা নিয়েও আলোচনা চালিয়েছেন উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য কর্তারা। সেই সঙ্গে কলকাতা-সহ জেলাতেও করোনা-পরীক্ষা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কলকাতার আশপাশের অঞ্চলে কেউ কোভিড আক্রান্ত হলে, তাঁদের সকলের জিন পরীক্ষার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ওমিক্রনে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে কি না তা দেখার জন্যই এই পদক্ষেপ।
প্রসঙ্গত, ওমিক্রনের চোখরাঙানির মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। বুধবার গঙ্গাসাগরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠক সেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি রাজ্যের শীর্ষস্তরের আমলাদের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার নির্দেশ দেন। পরিস্থিতির উপর নজর রেখে তৃতীয় ঢেউ রোখার প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছে মমতার সরকার।