লকডাউনে নববর্ষের শুভেচ্ছা
বঙ্গাব্দ প্রচলনের ভাবনা বা সৌরসিদ্ধান্ত পঞ্জিকার চিন্তা যাঁদের মাথায় জায়মান হয়েছিল একদা, তাঁরা সম্ভবত বেশ চমকেই যেতেন ১৪২৭ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছাবার্তা দেখে। আকবর বা শশাঙ্কের ধারণার বাইরে যে, বাঙালির নতুন বছরের শুভেচ্ছা-কাণ্ডে নতুন ‘জীবনানন্দ’ জন্ম নেবেন! কবির নামে ‘আমাদের দেখা হোক মহামারি শেষে’ সামাজিক মাধ্যমে ঘুরেছে। কোথাও ‘মহামারি শেষে’র বদলে ‘বিজয়ীর বেশে’ও। রং-রঙিন, চিত্রার্পিত মাস্ক-আঙ্গিকের শুভেচ্ছালিপি নিয়েও নিশ্চিত চমক লাগত শশাঙ্ক বা আকবরের! কারণ, করোনা-সংক্রমণের সঙ্গে পরিচয় ঘটার দুর্ভাগ্য তাঁদের হয়নি।
সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ঠিক ছিল। জাতি প্রস্তুত ছিল। জাতি জানতে পারল, লকডাউন ৩ মে অবধি বর্ধিত। এমনটাই যে হতে চলেছে, তার আন্দাজ ছিলই। কিন্তু জাতির মধ্যে যাঁরা বাঙালি, তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিল তাঁদের অতিপ্রিয় একটি চলচ্চিত্রের অনুষঙ্গ। ১৯৬১ সালে মুক্তি পাওয়া বাংলা ছবি ‘সপ্তপদী’। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি
অবলম্বনে অজয় করের এই ছবিতে কৃষ্ণেন্দু (উত্তমকুমার) আর রিনা ব্রাউনের (সুচিত্রা সেন) সংলাপের রসায়ন আবারও মনে পড়ে গেল বাঙালির। মনে করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দেওয়া সাতদফা পরামর্শ বা সপ্তপদী-নির্দেশিকা মুহূর্তে স্থান করে নিল সামাজিক মাধ্যমে। ‘ও যেন আমায় টাচ না করে’ বা ‘আমায় টাচ করবে না’ আবারও তাই উড়ন্ত রইল দিনভর ফেসবুকে।
আরও পড়ুন: বন্ধ দোকান, ক্রেতা-বরণে বাতিল মিষ্টিমুখ
‘টাচ’ বাঙালি করেনি। তবে হৃদয় উজাড় করে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছে। ঢেলে দিয়েছে সৃজনভাবনাও। সবই প্রায় করোনানন্দিত, করোনালাঞ্ছিত। কোথাও রঙিন মাস্কের একদিকে মাছ, অন্য দিকে ফুল আর মাঝে সূর্যচ্ছটা করোনা। তলায় ‘শুভ নববর্ষ’ লেখা। কোনওটায় একটা রথবাড়ি। ফ্ল্যাটের নানা তলে ঘরবন্দি নানা পরিবারের আলাদা আলাদা উদ্যাপন। একতলার সামনের রাস্তায় রয়েছে সামাজিকতার আবেশও। মাস্ক-পরা দু’জন। একজন সাহায্যের পুঁটলি তুলে দিচ্ছেন মাস্ক-পরা দরিদ্রের হাতে। দরিদ্র বোঝাতে সাদা গেঞ্জির উপর লাল তাপ্পি। অন্যজন বিস্কুট খাওয়াচ্ছেন পথকুকুরকে। আরও একটি ছবিবার্তায় কারা-গারদ। অবসন্ন দু’হাত আর মাথা গরাদ স্পর্শ করে রয়েছে। গরাদ-গারদের বাইরে মুক্ত পাখির নিশ্চিন্ত উড়ান। এ ছাড়াও আছে নানাবিধ। কোথায় মাস্ক-পরা বাঙালি ধুতি-পুরুষ আর শাড়ি-নারী। কোথাও ‘ঘরে থাকো, মিষ্টি খাও’। আবার কোথাও লেখা ‘বৈশাখ তুমি পারলে এনো/স্বপ্ন দেখার সেই চেনা দিন.../টিভিস্ক্রিন হবে মৃত্যুবিহীন’!
আরও পড়ুন: এ বার গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে নজর বস্তিতে
এ ভাবেই দূরত্ব বজায় রেখে উদ্যাপিত হয়েছে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটি। দিনভর ভার্চুয়াল যোগাযোগে গান-কবিতার আসর বসেছে। শূন্যপথপানে চেয়ে দিনটাকে একেবারে বৃথা যেতে দেয়নি বাঙালি। তবে, একটি বিষয় সম্ভবত দুঃখজনক ভাবে প্রণিধানযোগ্য। বাঙালির নববর্ষের উদ্যাপনবার্তায় বাঙালির রবীন্দ্রনাথ বড় জায়গা নিয়ে থাকতেই অভ্যস্ত। এ বার ‘বৈশ্বিক’ করোনাভাইরাসের অকল্যাণে তাঁর উল্লেখ কিছুটা যেন ম্লান। উল্লিখিত হলেও তিনি এসেছেন করোনা-আবহ সঙ্গে নিয়েই।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)