রবীন্দ্র সদনে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: ফেসবুক
তাপস পালের মৃত্যুকে ঘিরে এ বার বিজেপি-র ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাপস নন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তিন জনের প্রাণ গিয়েছে বলেও বুধবার দাবি করেন তিনি।
মঙ্গলবার ভোরে মারা গিয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা অভিনেতা তাপস পাল। বুধবার সকাল থেকে তাঁর দেহ শায়িত ছিল রবীন্দ্র সদনে। সেখানে এ দিন তাপসকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন মমতা। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিহিংসা মুলক রাজনীতির তৃতীয় শিকার তাপস পাল। একটি এজেন্সির দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিক ভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল তাপস। মৃত্যুর আগে জানতেও পারল না, অপরাধটা কোথায়!’’ তৃণমূল নেত্রীর দাবি, সেই চাপ সামলাতে না পেরেই অসময়ে চলে গেলেন তাপস পাল।
প্রায় ১ বছর এক মাস জেলে থাকার পর ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কটকের ঝাড়পদা জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তাপস পাল। বন্দিদশাতেই শারীরিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। জামিনে মুক্তি পাওয়ার বছর দুয়েকের মাথায় মৃত্যু হয় তাঁর। তাপসের মৃত্যুর পর গতকালই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলা শুরু করেছিলেন মমতার দলেরই শীর্ষ নেতৃত্ব। ফিরহাদ হাকিম বা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতারা বলতে শুরু করেছিলেন, বদলার রাজনীতির শিকার হতে হল তাপস পালকে। এ দিন সেই সুরকে আরও চড়ায় তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণ। কেন্দ্রীয় সরকারের জঘন্য প্রতিহিংসাপরায়ণ পরিকল্পনা থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছে না।’’
আরও পড়ুন: বিতর্কের রেশ ছুঁয়ে তাপসের অকালপ্রয়াণ
তাপস পালের সঙ্গেই মমতা এ দিন তৃণমূল নেতা সুলতান আহমেদ এবং তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুরও প্রসঙ্গও তোলেন। তাঁর দাবি, ‘‘তাপস পাল আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির তৃতীয় শিকার।’’ তিনি জানান, এর আগে একই রকম ভাবে চাপ সামলাতে না পেরে সুলতান আহমেদ এবং প্রসূনের স্ত্রী পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় মারা গিয়েছেন। সুলতান প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘একটা চিঠি পেল। একটা ফোন এল। তার পর বাথরুমে গিয়ে মারা গেল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তাপসও ফুরিয়ে গেল। অথচ তার যাওয়ার কথা নয়। এ তার অকালমৃত্যু।’’
আরও পড়ুন: কেন দূরে চলে যাচ্ছ, তাপসদা?
ফিরহাদ-পার্থরা ‘বদলার রাজনীতি’র যে তত্ত্ব গতকাল দিয়েছিলেন, তার পাল্টায় সরব হয়েছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘আজকের দিনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম নোংরা রাজনীতি করছেন। তাপসদা কেন্দ্রের বদলার রাজনীতি নিতে পারলেন না... ইত্যাদি বলছেন ওঁরা। ওঁদের জিজ্ঞেস করতে চাই যে, মাননীয়া দিদি যখন ভুবনেশ্বরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তখন নিষ্ঠুরের মতো তাপসদাকে কেন এড়িয়ে গিয়েছিলেন?’’
বাবুলের এই মন্তব্যের কোনও জবাব যদিও তৃণমূল শিবিরের তরফে এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বরং তাপসকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ফিরহাদ-পার্থের ওই তত্ত্বকে এ দিন আরও জোরালো ভাবে উপস্থাপন করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।