ভ্রূণের হৃদ্‌যন্ত্রে গন্ডগোল, গর্ভপাত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে বাংলার দম্পতি

তাঁদের আর্জি, এই ভ্রূণটি তাঁরা রাখতে চান না। তাই গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হোক। আইন অনুযায়ী, এখন ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের অনুমতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ভাবনাচিন্তা শুরু করলেও, তা রূপায়ণ হয়নি।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী ও অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

নয়াদিল্লি ও বারাসত শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০৪:৫৮
Share:

গর্ভস্থ ভ্রূণের বয়স ২৩ সপ্তাহ। কিন্তু ডাক্তারি রিপোর্ট বলছে, ভ্রূণের হৃৎপিণ্ডে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। এই শিশুর জন্ম হলে তিন মাসের মধ্যেই একাধিক বার ওপেন হার্ট সার্জারি করতে হবে। তার পরেও সে বাঁচবে কি না, তা অনিশ্চিত। এই মানসিক চাপের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বারাসতের এক তরুণ দম্পতি।

Advertisement

তাঁদের আর্জি, এই ভ্রূণটি তাঁরা রাখতে চান না। তাই গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হোক। আইন অনুযায়ী, এখন ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের অনুমতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ভাবনাচিন্তা শুরু করলেও, তা রূপায়ণ হয়নি। এ ক্ষেত্রে পরিবারের মানসিক যন্ত্রণার কথা ভেবে আইন শিথিল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আর্জি জানিয়েছেন ওই দম্পতি।

বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউলের বেঞ্চ আজ ওই দম্পতির আর্জি শুনে কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মত জানতে চেয়েছে। যেহেতু ভ্রূণের বয়স ইতিমধ্যেই ২৩ সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে, তাই দু’দিনের মধ্যে সরকারের মত জানতে চাওয়া হয়েছে। শুক্রবার ফের এই মামলার শুনানি হবে।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পর আজ বারাসতের বাড়িতে বসে ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলার শ্বশুর বলেন, ‘‘আমরা চাইলে বেআইনি ভাবেও গর্ভপাত করাতে পারতাম। কিন্তু তা না করে আমরা সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি চেয়েছি।’’ তরুণ দম্পতির এ’টিই প্রথম সন্তান। আইনজীবীরা বলছেন, এখন গর্ভপাত আইন বা মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি আইনে ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হলেও, তা শর্তসাপেক্ষ। যদি দেখা যায় গর্ভবতী মহিলার প্রাণের আশঙ্কা রয়েছে বা সন্তানের জন্মের পর মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে বড় ধাক্কা লাগবে, অথবা শিশুটি শারীরিক ও মানসিক ভাবে স্বাভাবিক হবে না, একমাত্র তখনই এই গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়।

এই দম্পতিই প্রথম নন। এমন অনেকেই গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কোথাও
শীর্ষ আদালত অনুমতি দিয়েছে, কোথাও
দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে আদালত সাধারণত কোনও মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে, তার পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়। কোনও দম্পতিকে যাতে আদালতে ছোটাছুটি না করতে হয়, সেই কারণেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক গর্ভপাত আইনে সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রস্তাব ছিল, ২০ সপ্তাহ সময়সীমাটি বাড়িয়ে ২৪ সপ্তাহ করা হোক। চিকিৎসকেরা ভ্রূণে বিকৃতি চিহ্নিত করলে সময়সীমা তুলে দেওয়া হোক।

শুধু বিবাহিত দম্পতি নয়। অবিবাহিত মহিলাদেরও গর্ভপাতের ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু তাতে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রীর দফতর বলেছে, এর ফলে গর্ভপাতের চক্রগুলির বাড়বাড়ন্ত হতে পারে। লিঙ্গ নির্ধারণের পর ভ্রূণ
হত্যাও বাড়তে পারে। দুই দফতরের টানাপড়েনের জেরে এখন আদালতের দ্বারস্থ বারাসতের ওই দম্পতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement