দিলদার খান। —নিজস্ব চিত্র
কয়েক ঘণ্টায় বদলে গেল নিহতের পরিচয়। সিউড়িতে সোমবার মনোনয়ন জমা দেওয়াকে ঘিরে রাজনৈতিক সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত দিলদার খান কোন দলের সমর্থক, তা নিয়ে চাপানউতোরে জড়াল বিজেপি এবং তৃণমূল। দুপুরে দাবি ছিল, দিলদার বিজেপির। বিকেলে তিনি তৃণমূলের। দু’টি দাবিকেই সমর্থন জানাল পরিবার।
সিউড়ি জেলা প্রশাসনিক ভবন থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরের কড়িধ্যায় সিউড়ি ১ ব্লক অফিস। এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই ব্লক অফিস থেকে মেরেকেটে ২০০ মিটার দূরেই গুলিবিদ্ধ হন স্থানীয় ছোড়া গ্রামের ভাটিপাড়ার বাসিন্দা দিলদার। তাঁর কোমরে গুলি লেগে তা নাভি ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনার পরেই তাঁর বাবা তহিদ খান দাবি করেন, ‘‘ছোট ছেলের স্ত্রী মনোনয়ন জমা দিতে কড়িধ্যা যাচ্ছিল (কোন দলের হয়ে তা স্পষ্ট করেননি)। সঙ্গে ছিল দিলদার। তখনই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা গুলি করে।’’ সিউড়ি জেলা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে শুরুতে ওই দাবি করেন নিহতের স্ত্রী লুৎফা বিবিও।
দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ কলকাতায় বিজেপির রাজ্য অফিসে বসে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং দলের নেতা শমীক ভট্টাচার্য জানান, দিলদার তাঁদের দলের সংখ্যালঘু মোর্চার বীরভূম জেলার সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে তৃণমূলের লোকজনই গুলি করে মেরেছে বলে দিলীপবাবুদের অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান, তৃণমূলের উজ্জ্বল সিংহও ঘটনার পরে বলেছিলেন, ‘‘আগে তৃণমূল করলেও, এখন দিলদারের পরিবার বিজেপি করে।’’
ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই বদলে যায় নিহতের পরিজনদের বয়ান। বিকেল ৪টে নাগাদ সিউড়ি শহরে জেলা তৃণমূলের অফিসে অনুব্রত মণ্ডলের পাশে বসে দিলদারের বাবা ও স্ত্রী দাবি করেন, ‘‘তখন আমাদের মাথার ঠিক ছিল না। বিজেপির কিছু লোক আমাদের ভুল বুঝিয়েছিল। আমরা তৃণমূল করি। ছোট বৌমা তৃণমূলের হয়েই মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছিল।’’ অনুব্রতের দাবি, ‘‘বিজেপি ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এনে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ব্লক অফিসের দিকে এগোচ্ছিল। তখনই আমাদের দলের কর্মী দিলদার গুলিবিদ্ধ হন।’’ বদলে যায় উজ্জ্বলের বয়ানও। তিনিও অনুব্রতের পাশে বসে বলেন, ‘‘বিজেপির দুষ্কৃতীরাই দিলদারকে মেরেছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, নিহতের পরিজনেরা বিজেপির কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও করেছেন। বিকেলে তৃণমূলের বীরভূমের পর্যবেক্ষক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও জানান, নিহত যুবক তাঁদের দলেরই কর্মী।
জেলা বিজেপির সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের যদিও দাবি, ‘‘বিরোধী দলের কর্মী খুন হলে বিপাকে পড়়তে হতে পারে, সেই ভেবেই দিলদারকে দলের কর্মী বলে চালাচ্ছে তৃণমূল। এটা মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়।’’