সচল: বামেদের ডাকা ধর্মঘটের দিনে ট্রেনে ভিড়। শুক্রবার বারাসত স্টেশনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
গ্রামে গ্রামে বাড়ছে বিজেপি। এর মধ্যেও আগ্রাসী তৃণমূলের সামনে দাঁড়িয়ে রক্তাক্ত দলের চেনা-অচেনা নানা মুখ। পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সাধ্যমতো ‘প্রতিবাদী’র চেহারা যখন স্পষ্ট হচ্ছে, সেই সময়েই ৬ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকে নিজেদের বিড়ম্বনায় ফেলল বামফ্রন্ট! কেন এমন ‘লোক দেখানো’ ধর্মঘট করে প্রতিবাদকে লঘু করে ফেলা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বাম শিবিরেই।
সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ছকভাঙা ধর্মঘটের দৃশ্যত কোনও প্রভাবই কোথাও পড়েনি শুক্রবার। ভাঙা সংগঠন নিয়েও যেখানে যতটুকু সংখ্যায় কর্মী-সমর্থকেরা ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করতে নামেন, এ দিন তাঁদের বড় অংশই নামেননি। বাস-ট্রাম, ট্রেন বা লঞ্চ স্বাভাবিক চলেছে। তার উপরে রাজ্যে যে কোনও ধর্মঘটের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এখন কড়া অবস্থান। এ বারও কড়া নির্দেশিকার প্রেক্ষিতে মহাকরণ-সহ সরকারি দফতরে হাজিরা ছিল প্রায় ৯৬%। ধর্মঘটের কোনও প্রভাব পড়েনি নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে।
ইদানীং নানা বিষয়েই সিপিএমের সঙ্গে যৌথ প্রতিবাদে সামিল হয় ১৭টি বাম দল। কিন্তু এই ধর্মঘটে ছিল না সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন। এসইউসি বাম দলগুলির ধর্মঘট ডাকার বৈঠকেই যায়নি। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ‘ভীরুতা’র প্রতিবাদে নকল মেরুদণ্ড নিয়ে মিছিল করতে গিয়ে বৃহস্পতিবারই বাম ছাত্র ও যুব সংগঠনের কর্মীরা পুলিশের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এই ধরনের প্রতিবাদ থেকে রক্তহীন সংগঠনের অন্দরে যে রুখে দাঁড়ানোর মেজাজ তৈরি হচ্ছিল, এ দিনের ধর্মঘট তাতে চোনা ফেলে দিল বলেই মনে করছেন যুব নেতৃত্বের বড় অংশ। সিপিএমের এক যুব নেতার কথায়, ‘‘আদালত যখন ১৬ তারিখ পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোটের প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দিল, সেটাই তো আমাদের অভিযোগের মান্যতা! এর পরে ধর্মঘট তুলে নেওয়া উচিত ছিল।’’ এমনকী, প্রাক্তন সিপিএম নেতা অনিল বসুরও কটাক্ষ, ‘‘মামলা করে সূর্যকান্ত মিশ্র ঠিক পথে গিয়েছিলেন। কিন্তু বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান শিশুসুলভ বিশৃঙ্খলা পাকালেন! দেখে মনে হচ্ছে, তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে শিশু চেয়ারম্যানের সমঝোতা হয়েছে!’’
বাম নেতৃত্বের অনেকেই একান্তে মানছেন, ভোর থেকে ৬ ঘণ্টার ধর্মঘটকে মানুষ আদৌ গুরুত্ব দেননি। কোণঠাসা বিমান বসুরাও এ দিন পাল্টা তথ্য দিয়ে ধর্মঘটের ‘সাফল্য’ দাবি করেননি। সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘আমরা বোমা ছুড়িনি, ভাঙচুর করিনি, আগুন জ্বালাইনি। মানুষের কাছে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শান্তিতে ধর্মঘট করার আবেদন করেছিলাম।’’ আর বিমানবাবুর বক্তব্য, ‘‘ধর্মঘট প্রত্যাহার করিনি, কারণ মানুষের কাছে প্রতিবাদ তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। শাসক দলের হরতাল-বিরোধী কথা থেকে বোঝা গিয়েছে, এই ধর্মঘটের প্রয়োজন ছিল!’’