—ফাইল চিত্র।
কোথাও ম্যানগ্রোভের প্রাচীর উল্টে পড়েছে, কোথাও বা ভেঙে গিয়েছে জেটি। অনেক জায়গায় ছিঁড়ে গিয়েছে বাঘ ঠেকানোর জাল! ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ধাক্কায় এমনই হাল সুন্দরবনের অরণ্যাঞ্চলের। বুধবার সেই দৃশ্য ঘুরে দেখেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বন দফতরের খবর, সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে আটশো কোটি টাকা!
বনকর্তারা জানাচ্ছেন, ক্ষয়ক্ষতি এত ব্যাপক যে, তা স্থায়ী ভাবে মেরামত করতে হলে অর্থ বরাদ্দ করা দরকার। তাই বুলবুলের ক্ষতি সামলে ওঠার বিষয়টি আগামী আর্থিক বছরের বাজেট বরাদ্দের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা ও প্রকল্পের মুখ্য বনপালদের কাছ থেকে সম্ভাব্য বরাদ্দের চাহিদা জানতে চাওয়া হয়েছে। বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির সবিস্তার রিপোর্ট চেয়েছি। তার পাশাপাশি আলাদা একটি ক্ষতিপূরণের হিসেব জমা দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে।’’ সরকারি সূত্রের খবর, কেন্দ্র যে-ক্ষতিপূরণ দেবে, তার কিছু অংশ পেতে পারে বন দফতর।
বন দফতরের কর্তারা জানান, একেবারে নদীর ধার ঘেঁষে ম্যানগ্রোভের যে-সারি থাকে, ঝড়ঝাপ্টা ঠেকাতে সেগুলিই রক্ষণের প্রথম সারির সৈনিকের কাজ করে। বুলবুলের দাপটে সেই গাছগুলিরই বেশি ক্ষতি হয়েছে, অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে। তার ফলে অরণ্যের ভিতর দিকটা কার্যত বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। ঝড়ের দাপটে নেতিধোপানির ঘাট ও দোবাঁকি, সজনেখালি-সহ বহু জায়গায় জেটি এবং তার সংলগ্ন বিভিন্ন নির্মাণ ভেঙে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে বনকর্মীদের ক্যাম্প। সৌরশক্তির প্যানেলেরও ক্ষতি হয়েছে। নেতিধোপানির ঘাটে পুরনো মনসা মন্দিরের যে-ভগ্নাবশেষ রয়েছে, ক্ষতি হয়েছে তারও।
আরও পড়ুন: অশান্ত ত্রিপুরা, শ্বশুরবাড়ি যাত্রা বাতিল খড়দহের বধূর
বনকর্তা ও পরিবেশবিদেরা জানান, সামুদ্রিক ঝড়ের দাপট থেকে সুন্দরবন ও কলকাতাকে রক্ষা করে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু বদলের প্রভাবে সামুদ্রিক ঝড়ের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাড়ানো জরুরি। বন দফতর জানাচ্ছে, অরণ্যের লাগোয়া বিভিন্ন জনপদে বাঘ ঠেকানোর জন্য নাইলনের জাল দেওয়া ছিল। ঝড়ে সেগুলিও ছিঁড়ে যায়। সেই জাল মেরামত করা হয়েছে। তবে বনকর্মীদের ক্যাম্পের লাগোয়া জালগুলিকে নতুন ভাবে মেরামত করতে হবে। এ ছাড়া বুধবার পরিদর্শনের সময় ঝড়ের ক্ষতি সামলে সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রগুলিরও উন্নয়নের নির্দেশ দিয়েছেন বনমন্ত্রী।