প্রতীকী ছবি।
শুধু রেশনের ক্ষেত্রে নয়, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পেও ‘ভুয়ো’, ‘ভুতুড়ে’ বা ‘জাল’ কার্ড থাকতে পারে বলে সন্দেহ রাজ্য প্রশাসনের। তাই ডিজিটাল রেশন কার্ডের মতো এ বার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পেও ঝাড়াইবাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে সব জেলা প্রশাসনকে এই মর্মে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সরকার চাইছে, স্বাস্থ্যসাথীর সুযোগ-সুবিধা শুধু প্রকৃত উপভোক্তাদেরই হাতে পৌঁছক। বিধিমতো নথিপত্র না থাকলে কার্ড ‘ব্লক’ করে দেওয়া হবে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২.৩০ কোটি পরিবার স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পেয়েছে। ব্যক্তি-উপভোক্তা ধরলে সংখ্যাটা কমবেশি আট কোটি। প্রশাসন লক্ষ্য করেছে, স্বাস্থ্যসাথীর তথ্যভান্ডারে এমন অন্তত ৫০ লক্ষ উপভোক্তা রয়েছেন, যাঁদের আধার নম্বরের উল্লেখ নেই। আবার কিছু কার্ডে একই আধার নম্বর। তাই প্রকৃত আধার নম্বরযুক্ত কার্ডগুলি চিহ্নিত করতে সব জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “দুয়ারে সরকার কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসাথীতে নাম নথিভুক্ত করার জন্য আধার বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এমন হতেই পারে যে, আগে নথিভুক্ত উপভোক্তাদের একাংশের কাছে প্রকৃত আধার নম্বর থাকলেও তা নথিবদ্ধ হয়নি। আবার অসাধু উপায়ে কেউ কার্ড পেলে তা-ও চিহ্নিত করা প্রয়োজন।”
মূলত দু’টি উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড যাচাইয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রথমত, সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা প্রকৃত উপভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া। অনেক অর্থনীতিবিদই বলে থাকেন, সামাজিক খাতে খরচ করা ভাল, তবে সেই সুবিধা উপযুক্ত প্রাপকদের হাতে পৌঁছে দেওয়াটাও সমান জরুরি। দ্বিতীয়ত, সাশ্রয়। রাজ্যে বহু সামাজিক প্রকল্প চলছে এবং সেই সব খাতে খরচ বিপুল। আয়ের সীমিত উৎসের মধ্যে সেই সব খরচ চালানো বেশ কঠিন। তাই সরকার শুধু প্রকৃত উপভোক্তাদের জন্যই অর্থ ব্যয় করতে চাইছে। বাতিলযোগ্য কার্ড চিহ্নিত করা গেলে বিপুল অঙ্কের টাকা বাঁচানো সম্ভব এবং তাতে প্রকৃত প্রাপকদের চাহিদা মেটানো সহজ হবে।
সমস্যা কোথায়
• অনেক উপভোক্তার আধার নম্বরের উল্লেখ নেই কার্ডে
• সেই সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ
• অনেক কার্ডে একই আধার নম্বর
• একই পরিবার ভেঙে কি একক সদস্যের পরিবার দেখানো হচ্ছে
• সরকারি অনুমানের থেকেও একক সদস্যের পরিবারের সংখ্যা বেশি
অভিজ্ঞ প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, স্বাস্থ্যসাথী খাতে বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা। উপভোক্তা পরিবারের সংখ্যা প্রায় ২.৩০ কোটি। এর আড়াই শতাংশ বা কমবেশি ছ’লক্ষ কার্ড বাতিলযোগ্য বলে চিহ্নিত হলেও বছরে ৪০-৫০ কোটি টাকা বাঁচবে।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পটি রাজ্যবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরে সরকার জানিয়েছিল, পরিবারের প্রধান মহিলা সদস্যের নামে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হবে। বাকি সদস্যেরা বাড়ির প্রধান মহিলা উপভোক্তার অধীনে ওই সুবিধা পাবেন। দ্বিতীয় দুয়ারে সরকার কর্মসূচির সময়ে নবান্ন নির্দেশ দিয়েছিল, জেলা স্তরে যাচাই না করে ‘সিঙ্গল মেম্বার ফ্যামিলি’ বা একক উপভোক্তাকে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। কিন্তু অন্তত ১০ লক্ষ উপভোক্তা পরিবারকে চিহ্নিত করা গিয়েছে, যেখানে উপভোক্তা এক জনই। সেই সব পরিবারে অফিসার পাঠিয়ে জেলা প্রশাসনকে যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “অনেকে দীর্ঘ দিন একা থাকেন। পরিজন কেউ নেই। তেমন কাউকে একক উপভোক্তা ধরে নিতে সমস্যা নেই। কার্ড পেতেও সমস্যা নেই। কিন্তু পরিবার ভেঙে বা তেমন দাবি করে একই পরিবারে একাধিক কার্ডের বন্দোবস্ত করার চেষ্টা ঠিক নয়। তাই বিষয়টি দেখা খুব দরকার।” সে কারণে জেলা শাসকদের নবান্ন নির্দেশ দিয়েছে, প্রতি উপভোক্তার আধার নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। সেই নম্বর মূল তথ্যভাণ্ডারে সংযুক্ত থাকবে। একমাত্র সব ন্যায্য উপভোক্তারা প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী পরিবারের সঙ্গে একক উপভোক্তার সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকলে তা করা হবে। পরিবারের সঙ্গে যুক্ত করার পরে সংশ্লিষ্ট একক উপভোক্তার কার্ড বন্ধ করা হবে।