ঠাকুরনগরে অমিত শাহ। —নিজস্ব চিত্র
ভোটের আগে মতুয়া মন জয়ে দরাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নাগরিকত্ব নিয়ে নতুন কথা না শোনালেও বৃহস্পতিবার প্রতিশ্রুতি দিলেন, কোভিড টিকাকরণের পরেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হবে। সঙ্গে ঠাকুরনগর স্টেশনের নাম ‘শ্রীধাম ঠাকুরনগর’ করা, দলপতিদের পেনশনের মতো একাধিক প্রতিশ্রুতি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিঁধলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
গত লোকসভা ভোটের আগে ঠাকুরনগরে এসে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শাহ। সেই কথা মনে করিয়ে শাহ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘এখানে ভোটের আগে মতুয়াদের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ভোটে মতুয়ারা আমাদের ঝুলি পদ্মফুলে ভরিয়ে দিয়েছেন। আমরাও নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) সংসদে পাশ করেছি।’’
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, নাগরিকত্ব আইন পাশ হলেও কার্যকর হয়নি। এই আইন কার্যকরের বিরোধিতাও করছেন মমতা-সহ বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। তার জবাব দিতে শাহ বেছে নিলেন সেই মতুয়া সম্প্রদায়ের মঞ্চকেই। বললেন, ‘‘আইন পাশ হওয়ার পরেই করোনা চলে এল। তাই কার্যকর করা যায়নি। কিন্তু আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, করোনার টিকাকরণ শেষ হলেই সিএএ কার্যকর করা হবে।’’
ঘটনাচক্রে বোলপুরে সাংবাদিক বৈঠকেও একই কথা বলেছিলেন শাহ। পাশাপাশি তাঁর এই বক্তব্যের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই আইন কার্যকরের জন্য নির্দিষ্ট কোনও সময়সূচি বেঁধে দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ নিয়ে সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিক বৈঠকে বলার পর আমরা অনুরোধ করেছিলাম, মতুয়া সম্প্রদায়ের নীতি নির্ধারকদের সামনে ওই কথাগুলো বলতে বলতে। বৃহস্পতিবার সেটাই করেছেন অমিত।’’
অন্য দিকে, তৃণমূল নেত্রী মমতা শুধু সমালোচনা নয়, রীতিমতো হুঙ্কার দিয়েছেন, রাজ্যে সিএএ কার্যকর করতে দেবেন না। তা নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতেও ছাড়েননি অমিত। তাঁর কথায়, ‘‘মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ বহু বছর ধরে নাগরিকত্বের দাবি করে আসছেন। কেউ তাঁদের কথা শোনেননি। আমরা যখন তাঁদের নাগরিকত্ব দিচ্ছি, তখন দিদি বলছেন, কার্যকর করতে দেবেন না। কেন্দ্র এই আইন কার্যকর করতে চাইলেও বাধা দেবেন।’’ এর পরই শাহের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘দিদি, এটা সংসদে পাশ হওয়া আইন। সেই আইনকে কী ভাবে বাধা দেবেন?’’
শাহের কটাক্ষ, ‘‘এপ্রিলের পর অবশ্য আপনি আর বাধা দিতেও পারবেন না। কারণ ভোটের পর আপনি আর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না।’’ একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, ‘‘আমি এই মঞ্চ থেকেই আপনাদের আশ্বস্ত করছি, আপনারা ভারতের নাগরিক হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবেন।’’
নাগরিকত্বের পাশাপাশি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে ‘পিএম কিসান সম্মান নিধি’ এবং ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প চালুর কথা ফের বলেছেন শাহ। মতুয়াদের জন্য এর বাইরেও আলাদা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অমিত। বলেছেন, ঠাকুরনগর স্টেশনের নাম ‘শ্রীধাম ঠাকুরনগর’ করা হবে। এ ছাড়া মতুয়া দলপতিদের জন্য পেনশন, শরনার্থী কল্যাণে আলাদা প্রকল্পের কথাও মঞ্চে বলেছেন তিনি। মতুয়া সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের জন্য কিছু প্রকল্প চালু করা যায় কি না, তা নিয়েও কেন্দ্র ভাবনা চিন্তা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।