হাসপাতালে পরিবহ মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
খবর রটেছিল মুখ্যমন্ত্রী আসছেন তাঁকে দেখতে। মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসের সামনে তখন জোর তৎপরতা। গার্ডরেল করে ঘিরে দেওয়া এলাকা পেরিয়ে রিসেপশনে প্রশ্ন করতেই জানা গেল, ছ’তলার ৬১৯ নম্বর ‘বিশেষ সিঙ্গল কিউবে’ রয়েছেন তিনি। ঘরের বাইরে নিরাপত্তারক্ষীর কড়া প্রহরা।
বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ সেই ৬১৯ নম্বর ঘরে ঢুকে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর জন্য জোর তৎপরতা সেখানেও। রোগীকে বিছানা থেকে তুলে দাঁড় করিয়ে পোশাক বদলের মাঝেই এক যুবক বলে চলেছেন, ‘‘তোর কিছু বলার দরকার নেই। যা বলার আমরাই বলব। বেশি নড়াচড়াও করিস না!’’ রোগীর জন্য আসা টেবিলে রাখা দইয়ের প্লেটটা দেখিয়ে এর পরে ওই যুবক বলেন, ‘‘ওটা খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়।’’ সম্মতি জানিয়ে তৈরি হয়ে শুয়ে পড়েন পরিবহ মুখোপাধ্যায়।
কেমন আছেন পরিবহ? তা দেখতেই শনিবার যাওয়া হয়েছিল মল্লিকবাজারের সেই হাসপাতালে। সেখানকার মেডিক্যাল সুপার প্রসেনজিৎ বর্ধন রায় বললেন, ‘‘এখন আগের থেকে অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। সম্পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে। খাবারও খাচ্ছেন। গতকাল করা রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আজ এসেছে। সেখানে সব ঠিকই আছে। মাথায় যেখানে আঘাত লেগেছিল, সেই জায়গাটাও এখন ঠিক আছে। সব মিলিয়ে রোগী সুস্থই রয়েছেন।’’
তবে রাতে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, পরিবহের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হচ্ছে। সাময়িক স্মৃতিভ্রংশেরও শিকার তিনি। পরিবহের সার্জন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
হাসপাতালে পরিবহের ঘরে মূল শয্যার পাশে খয়েরি রঙের দু’টি সোফা। কেউ দেখা করতে এলে সেখানে বসেই রোগীর সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। ওই মূল শয্যার পাশেই ঘরের মধ্যে সাদা চাদর পাতা আরও একটি শয্যা রয়েছে। রোগীর জন্য রাতে যিনি থাকছেন সেখানেই তাঁর শোয়ার ব্যবস্থা। এছাড়াও ঘরে মধ্যে মূল শয্যার ঠিক উল্টোদিকের একটি টেবিলে রাখা হচ্ছে রোগীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং পছন্দের খাবার। সন্ধ্যায় হাসপাতালেই চুল কাটানো হয় পরিবহের। জানা গেল, পরিবহের সঙ্গে হাসপাতালে সর্বক্ষণ থাকছেন এনআরএসেরই এক ইন্টার্ন ও পরিবহের এক বন্ধু। তাঁদের সঙ্গেই গল্প করে সময় কাটছে আহত চিকিৎসকের। হাসপাতালেই সময় কাটছে পরিবহের জামাইবাবুরও। এ ছাড়া নিয়ম করে রোগীকে দেখতে আসছেন নানান হাসপাতালের চিকিৎসক এবং পরিবহের ইন্টার্ন বন্ধুরা। গিয়েছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও।
শনিবার দুপুরে পরিবহের সঙ্গে যে ইন্টার্ন ছিলেন, ঘটনার দিন তিনিও আহত হয়েছিলেন বলে জানালেন। তাঁর ডান পায়ে ব্যান্ডেজ করা। তিনিই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য রোগীকে তৈরি করে দেওয়ার ফাঁকে জানতে চাইলেন ‘পরিবহ আপনাকে চেনেন?’ সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় পরিবহ বলেন, ‘‘না, ঠিক চেনা নেই।’’ কেমন আছেন? প্রশ্ন শুনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই পরিবহের উত্তর, ‘‘ভালই আছি। এখন আর সে রকম সমস্যা হচ্ছে না।’’
আন্দোলন কি তুলে নিতে বলবেন সহকর্মী চিকিৎসকদের?
পরিবহকে থামিয়ে বন্ধু বললেন, ‘‘ও সুস্থ হয়ে ফিরুক। নিজে খবর দিয়ে দেখা করে কথা বলব আমরা। এখন ও তৈরি হবে।’’