নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী।
সন্ধে ছ’টা পঁচিশ: আচমকাই সাংবাদিক বৈঠক স্থগিত রেখে বেরিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলে গেলেন, ‘‘কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার এসেছে। আমি ওদের সঙ্গে কথা বলে আসছি। আপনারা বসুন।’’
মিনিট তিনেকের মধ্যেই ফিরে এলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফিরেই বললেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ কাজে ফিরতে চাইছেন।’’ কিন্তু তারা কারা বা কোন মেডিক্যাল কলেজে আছেন, তা স্পষ্ট করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন ধৈর্য ধরে রয়েছে। এটা প্রশাসনের মানবিক মুখ।’’ মমতার দাবি, তাঁর সঙ্গে রাজ্যপালের কথা হয়েছে। সরকারের অবস্থানে রাজ্যপাল সন্তুষ্ট।
ফের বললেন, ‘‘আমরা এখানে এসমা জারি করতে চাই না। কিন্তু ডাক্তাররা তাড়াতাড়ি কাজে যোগ দিন। আমাদের হাতে আইন আছে। কিন্তু প্রয়োগ করতে চাই না। কারও কেরিয়ার নষ্ট করতে চাই না।’’ মমতার দাবি, ‘‘স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কাজে যোগ দেওয়ার লোক আছে। যারা কাজ শুরু করতে চায়, করুক। সকলে এরপর একে একে করবে। বাঁধ ভাঙবে।’’
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সকদের গণ ইস্তফার প্রসঙ্গ উঠলে তা উড়িয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আইনত এই গণ ইস্তফার কোনও মূল্য নেই। আমরা অপেক্ষা করছি ওরা আলোচনায় আসবেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্মান জানানো উচিত।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘গরীব লোক কোথায় যাবেন? তোমরা যা চেয়েছ, সব করেছি।আর কত? সকলে বহিরাগত নন। আমি তো বলেছি, কে কোথায় কাজ করে। ওদের মধ্যে কয়েকজন বহিরাগত আছে। সকলেই বহিরাগত, এটা বলিনি কখনও।’’
সন্ধে ছ’টা দশ: বলতে শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘গত ১০ তারিখ রাতে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তার পর আমরা সব দিক থেকে চেষ্টা করছি। পরের দিনই স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলাম। ওরা আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইনি। অসম্মানিত হয়েছিলাম। কিন্তু কিছু বলিনি। কিন্তু বিনা চিকিত্সায় অনেকে মারা গিয়েছেন। চিকিত্সকরা আমাদের গর্ব। ভগবান মনে করি। রোগীরা যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, তা মর্মান্তিক’’ বলেন মমতা।
আরও পড়ুন, ‘অসত্ উদ্দেশ্যে ডাক্তার আন্দোলনে বাইরের লোক’, বহিরাগত বিতর্কে এ বার শান্তনু সেন
মু্খ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্য কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে অন্য ব্যবস্থা নেয়। ওড়িশা, দিল্লি, গুজরাত, রাজস্থান— সর্বত্র এসমা জারি করা হয়েছে এর আগে। মানবিকতায় বিশ্বাস করি বলে এসমা করিনি। রেজিস্ট্রেশন বাতিল করিনি। কারও কারও প্ররোচনায় ছাত্রছাত্রীরা আসছেন না হয়তো। গতকাল আসব বলে আজ সিদ্ধান্ত বাতিল করলেন কেন?’’
‘‘কথা বলতে চাইলে কথা বলতে পারেন। নবান্ন প্রশাসনের সদর দফতর। এখানে দরজা খোলা। সরকার চাইছে কথা বলতে। সেটা অমান্য করা ঠিক নয়’’ বললেন মমতা।
মু্খ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে উল্টোপাল্টা মন্তব্য করা হচ্ছে। আমি পুলিশকে বলেছি, কোনও ব্যবস্থা নেবেন না। অন্য কোথাও হলে কিন্তু এমনটা হত না।প্রবীণরা তাঁদের মতো করে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ওদের প্রতিনিধি দল কথা বলতে এল না। আমি চিকিত্সক মহল, স্বাস্থ্য মহলের কাছে আবেদন জানিয়েছি, আপনারা কাজে যোগদান করুন।’’
‘‘চন্দ্রিমা তিন ঘণ্টা কথা বলেছেন। পুলিশ কমিশনার নিজে গিয়েছেন। স্বাস্থ্য সচিব গিয়েছেন। সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তার পরেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে শেম শেম ধ্বনি দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আকস্মিক কিছু ঘটে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা দেখুন। ঘটনা বাড়তে পারত। পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা জামিন পায়নি’’ বলেন মমতা।
সন্ধে ছ’টা: নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে এলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে মুখ্যসচিব।
প্রথমেই মুখ্যসচিব মলয় দে-কে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিব বললেন, ‘‘আমাদের সমস্ত হাসপাতালের ভিতর নিরাপত্তার ব্যবস্থা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে ইন্টার্ন আহত হয়েছিলেন তিনি এখন ভাল আছেন। সরকার তাঁর যাবতীয় খরচ দেবে। স্বাস্থ্যসচিব ওখানে গিয়েছেন।’’
মলয়বাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা কথা বলেননি। সরকারের তরফে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা জারি রয়েছে। হাসপাতালে পুলিশের টিম সব সময় থাকবে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে দিকে নজর থাকবে।
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।