মেডিকা হাসপাতালের বহির্বিভাগে অপেক্ষমাণ রোগীরা। সোমবার সকালে। ছবি: আর্যভট্ট খান
এন আর এসের এক চিকিৎসককে নিগ্রহের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করছেন তাঁরা। কিন্তু সেই আন্দোলনের পন্থা, অর্থাৎ কর্মবিরতিকে নয়। এমনই জানিয়েছেন শহরের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। সে কারণে ওই হাসপাতালগুলিতে বহির্বিভাগ (ওপিডি) এবং অন্য বিভাগে পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। যদিও সেখানে চিকিৎসক এসেছেন কম।
যেমন বাইপাসের রুবি হাসপাতালের বহির্বিভাগে সোমবার গিয়ে দেখা গেল, অন্য দিনের মতো ব্যস্ততা না থাকলেও রোগীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অপেক্ষা করছেন। এমনই এক জনের বাবা জানালেন, তাঁর ছেলের জ্বর। ওপিডি বন্ধ থাকবে জেনেও তিনি ছেলেকে নিয়ে এসেছেন এই আশায়, যদি কোনও ডাক্তার দেখানো যায়। হাসপাতাল তাঁকে ফেরায়নি। সোনারপুর থেকে আসা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘রিসেপশনে থাকা এক কর্মী জানালেন, ডাক্তারবাবু আসবেন।’’ রুবি হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার শুভাশিস দত্ত বলেন, ‘‘এ দিন বহির্বিভাগে অনেক কম ডাক্তার এসেছেন। কিন্তু পরিষেবা পুরো বন্ধ হয়নি। ওপিডি মানে তো শুধু ডাক্তারদের দেখানো নয়। নানা ধরনের পরীক্ষা যেমন ডায়ালিসিস, রেডিয়োথেরাপি ইত্যাদিও হয়। দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা আসেন। কী করে পরিষেবা পুরো বন্ধ রাখি?’’ ছবিটা অনেকটা এক মুকুন্দপুরের মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সেখানেও এ দিন ওপিডি-তে ভিড় ছিল রোগীর।
তবে সব বেসরকারি হাসপাতালের চিত্রটা এমন আশাপ্রদ নয়। বাইপাসেরই রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেসে বেলা ১২টা নাগাদ গিয়ে দেখা গেল, ওপিডি প্রায় পুরো বন্ধ। ঢাকা থেকে সেখানে চিকিৎসার জন্য এসেছেন সালমা বেগম। সঙ্গে মা রৌশন আরা। সালমা বলেন, ‘‘আজ এসে শুনলাম ডাক্তারবাবু বসবেন না। এখানে ঘর ভাড়া করে থাকছি। এক দিন দেরি হলে নানা সমস্যা হয়।’’ অশোকনগর থেকে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এসেছিলেন। তাঁকেও ফিরে যেতে হয়েছে। ওই হাসপাতালের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যাঁরা এ দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে রেখেছিলেন, তাঁদের ফোন করে আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে অন্য সব বিভাগ খোলা আছে।’’
আরও পড়ুন: ফের কাজে ডাক্তারেরা, সঙ্কট কাটিয়ে সকাল থেকেই আউটডোর হবে স্বাভাবিক
রুবি মোড়ের কাছে ফর্টিস হাসপাতালেও একই চিত্র। যাঁরা না জেনে এসেছেন, তাঁদের ফিরে যেতে হয়েছে। ফর্টিসের এক আধিকারিক জানান, অন্য রাজ্যে তাঁদের সব হাসপাতাল বন্ধ আছে। যাঁদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা ছিল, তাঁদের ফোনে পরিষেবা বন্ধ থাকার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ওপিডি বাদে অন্য সব বিভাগ খোলা আছে।
আরও পড়ুন: মানুষের চাপেই গোঁ ছাড়লেন ‘বিপ্লবীরা’
বাইপাসের আর একটি বেসরকারি হাসপাতাল পিয়ারলেসে আবার উল্টো ছবি। সেখানে বহির্বিভাগে এ দিন যথেষ্টই ভিড় ছিল রোগীর। হাসপাতালের চিফ এগজিকিউটিভ সুদীপ্ত মিত্র জানালেন, পরিষেবা চালু থাকলেও চিকিৎসকের সংখ্যা কম ছিল। তবে তাঁর দাবি, ‘‘আমরা কাউকে ফেরাইনি। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করলেও তাঁদের কর্মবিরতির পন্থায় সায় দিতে পারছি না। এর প্রতিবাদে কয়েক জন ওপিডি-তে বিনামূল্যে রোগী দেখেছেন।’’