—ফাইল চিত্র।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু চিকিৎসকদের মতো মহান, বিশিষ্ট ও সচেতন লোকজন সেই ঘটনার মোকাবিলা এমন ভাবে করতে পারেন না। শুক্রবার একটি জনস্বার্থ মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ করেছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করন নায়ার রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চ।
একই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে। প্রধান বিচারপতি রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, অসুস্থ মানুষের বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে চিকিৎসকদের উচিত বিরোধ মিটিয়ে নেওয়া। চিকিৎসকদের মনে রাখতে হবে, তাঁরা ডাক্তারি পাশ করার সময় শপথ নিয়েছেন। তার পরে এমন কাজ করা যায় না। ডিভিশন বেঞ্চ এই পর্যবেক্ষণের পরে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর জেরে যাবতীয় ঘটনায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার একটি সামগ্রিক রিপোর্ট ২১ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির সময় আদালতে পেশ করতে হবে।
জনস্বার্থ মামলা করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসকদের ধর্মঘট অনৈতিক ও অবৈধ। রাজ্য সরকার বা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল অসুস্থ ও চিকিৎসাধীন রোগীদের স্বার্থ দেখতে আদৌ উদ্যোগী হয়নি। ধর্মঘটে যোগ দেওয়া চিকিৎসকেরা শৃঙ্খলা ভাঙছেন, অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকেরা যাতে নিরুপদ্রবে কাজ করতে পারেন, তারও ব্যবস্থা করা হয়নি। ধর্মঘটী চিকিৎসকদের অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারী তথা চিকিৎসক কুণাল সাহা এ দিন তাঁর সওয়ালে জানান, চিকিৎসকদের ধর্মঘটের জেরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কয়েক জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি জানতে চান, কেন ধর্মঘট হচ্ছে? ওই চিকিৎসক জানান, কিছু চিকিৎসককে মারধর করা হয়েছে বলে।
প্রধান বিচারপতি রাধাকৃষ্ণন এর পরে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তের কাছে জানতে চান, ধর্মঘটের মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে। এজি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হস্তক্ষেপ করেছেন। মারধরের ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। তদন্ত চলছে। ধৃত পাঁচ জনকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হচ্ছে।
এজি-র বক্তব্য শোনার পরে প্রধান বিচারপতি তাঁর কাছে জানতে চান, এ রাজ্যের ‘এসমা’ (এসেনশিয়াল সার্ভিসেস মেনটেন্যান্স অ্যাক্ট) আইন রয়েছে কি না। এজি জানান, নেই।ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, আদালত আশা করছে, পরবর্তী শুনানির আগেই পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি হবে।