—প্রতীকী ছবি।
লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে পুরো দমে প্রস্তুতিতে নেমে গিয়েছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট-প্রস্তুতির জন্য জেলা সফর শুরু করছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের পাশাপাশি ঘর গুছোতে শুরু করেছে সিপিএমও। যুব সংগঠনের ডাকে ব্রিগেজ সমাবশের বহর ও মেজাজ তাদের উৎসাহ বাড়িয়েছে। এমতাবস্থায় জোট নিয়ে নানাবিধ চর্চা ছাড়া বঙ্গের কংগ্রেস শিবিরে এখনও তেমন কোনও তৎপরতা নেই। লোকসভা ভোটের অদূরে দাঁড়িয়ে এমন স্থবিরতার ছবি প্রশ্ন ও ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে কংগ্রেসের অন্দরেই।
রাজ্যে লোকসভা ভোটে দলের রণকৌশল কী হবে, প্রার্থীদের প্রাথমিক বাছাই কী ভাবে হবে, সাংগঠনিক হাল কোথায় কেমন— এ সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য প্রদেশ কংগ্রেসে এখনও কোনও বৈঠকই হয়নি! দিল্লিতে রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খড়্গের নেতৃত্বে এআইসিসি বাংলার নেতাদের ডেকে পাঠিয়েছিল আলোচনার জন্য। বাংলায় দলের কী করা উচিত, তা নিয়ে দিল্লির সেই বৈঠকে রাজ্যের নেতারা মতামত দিয়ে এসেছেন। যদিও সেই বৈঠকে হাজির থাকার জন্য কীসের ভিত্তিতে নেতাদের বাছাই করা হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে দলের একাংশের। এর পরে রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে রাজ্যে আসছেন এআইসিসি-র তরফে বাংলার নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গুলাম অহমেদ মীর। দায়িত্ব পাওয়ার পরে এটাই হতে চলেছে তাঁর প্রথম বঙ্গ সফর। সূত্রের খবর, বিধান ভবনে আগামী ১৩ জানুয়ারি এআইসিসি পর্যবেক্ষকের উপস্থিতিতে বৈঠক হতে চলেছে প্রদেশ কংগ্রেসের। যার সূত্র ধরে দলেরই একাংশের প্রশ্ন, তার মানে এআইসিসি পর্যবেক্ষক না এলে এই বৈঠকের আয়োজনও হত কি?
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী লোকসভা ভোটের আগে তাঁর নিজের কেন্দ্র বহরমপুরে আরও বেশি করে মনোনিবেশ করেছেন। তাঁর কর্মসূচি হচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলা ঘিরেই। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য স্তরে দলের কর্মসূচি সমন্বয় করার জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়নি কংগ্রেসে। উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতিরা শহরে তাঁদের মতো করে কিছু কর্মসূচি নিচ্ছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্রেরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গিয়ে তাঁদের কথা বলে যাচ্ছেন। এর বাইরে প্রদেশ কংগ্রেসের সার্বিক কোনও পরিকল্পনা বা কর্মসূচি এখনও দেখা যাচ্ছে না। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘শেষ পর্যন্ত কারও সঙ্গে জোট হোক বা দল একা লড়ুক, কংগ্রেস কর্মীদের তো মাঠে নেমে কাজ করতে হবে। কিন্তু আলোচনার ভিত্তিতে রাজ্যে দলের কোনও নির্দিষ্ট নীতি বা পরিকল্পনা ঠিক হয়নি। অন্য দলের সঙ্গে কথা বলা তো পরের কথা, আগে তো নিজেদের দলে আলোচনা দরকার! এই অবস্থায় বিভিন্ন নেতা যে যাঁর মতো বলে চলেছেন!’’
জোট-প্রশ্নে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তও এখনও ঝুলে। প্রদেশ সভাপতি অধীর একাধিক বার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘মমতার দয়া-দাক্ষিণ্যে’ তিনি নির্বাচনে লড়তে যেতে চান না। কিন্তু এআইসিসি সূত্রের ইঙ্গিত, বাংলা থেকে কয়েকটি আসন জয় যদি নিশ্চিত হয়, সেই স্বার্থে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতায় রাজি। শুধু আসন জয়ের ‘নিশ্চয়তা’র অঙ্কে তাঁরা এমনকি মমতার সঙ্গে বিশেষ দরাদরিতে যাবেন কি না, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই! প্রদেশ কংগ্রেসের বড় অংশই অবশ্য আশঙ্কা করছে, তৃণমূলের হাত ধরলে ফল বিপরীত হতে পারে। তৃণমূল ও কংগ্রেস, দু’দলেরই নিচু তলা তখন পরস্পরকে সমর্থন করতে বেঁকে বসতে পারে। তাতে আখেরে লাভ বিজেপির। কিন্তু দিল্লিকে সে সব বোঝাবে কে!
পরিস্থিতির নিরিখে প্রদেশ কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতার আক্ষেপ, ‘‘অন্য তিন দল যখন ময়দানে লড়বে, সেই সময়ে হতাশা নিয়ে ঘরে বসে থাকতে হবে মনে হচ্ছে! নীতির প্রশ্নে এত অস্থিরতা, সংগঠনে এত জড়তা নিয়ে কি দল চলতে পারে!’’