‘বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল’
‘বাঙালির রক্তে ব্যবসা নেই’— এই প্রথাগত প্রবাদ বাক্য থেকে বাঙালি এখন অনেকটাই বেরিয়ে আসতে পেরেছে। সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতিতে বদল এসেছে। প্রথাগত ধারণার বাইরে গিয়ে এখন বাঙালিরাও ব্যবসামুখী। তাঁদের মধ্যে ব্যবসা বিষয়ক ভাবনাচিন্তার পরিবর্তন আনতে বঙ্গীয় বাণিজ্য পরিষদ বা ‘বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল’ এক অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।
২০২১ সালে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাপী বাঙালি ব্যবসায়ীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ‘বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল’। সংগঠনের মূল ভিত্তি হল বাঙালি ব্যবসায়ীদের সকলের কাছে পরিচিত করে, তাঁদের কণ্ঠস্বরকে একজোট করা। যা কর্মসংস্থান, জীবিকা, সংস্কৃতির উন্নয়নের পাশাপাশি সমগ্র সমাজের বিকাশের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গত ২৪ অগস্ট, বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে ‘বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল’-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা, এমডি, সিইও এবং ‘বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল’-এর সভাপতি চন্দ্রশেখর ঘোষের সংবর্ধনা প্রদান এবং ‘বেঙ্গল বিজ়নেস অ্যাঞ্জেলস’ নেটওয়ার্কের আনুষ্ঠানিক সূচনা। বাঙালি ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাকে উন্নত করতেই বঙ্গীয় বাণিজ্য পরিষদের এই বিশেষ উদ্যোগ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘জ্ঞান বৈঠক’ নামে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এই সেশনের দায়িত্বে ছিলেন সার্ভিস সেক্টর ব্র্যান্ডিং অ্যান্ড মার্কম এবং আইডিয়া সেলুলার ব্র্যান্ডের মাস্টারমাইন্ড মানস সেনগুপ্ত। অত্যন্ত দক্ষ পরিচালনার সঙ্গে আয়োজিত এই সেশনটি দর্শকের কাছে মনোজ্ঞ হয়ে ওঠে।
আলোচনার শেষে অনুষ্ঠানের পরবর্তী পর্ব ছিল মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এই পর্বেই বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা, এমডি, সিইও এবং ‘বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল’-এর সভাপতি চন্দ্রশেখর ঘোষ ও উজ্জীবন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা সমিত ঘোষকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। চন্দ্রশেখর ঘোষ তাঁর মূল্যবান বক্তব্য ও দর্শকের প্রশ্নের যথাযথ উত্তরে সকলকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। বন্ধন ব্যাঙ্ক শুরুর যাত্রার কথাও তিনি সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন।
বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা, এমডি, সিইও চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, “বন্ধন ব্যাঙ্ক শুরুর যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে ২০০০ সালে এই ব্যাঙ্কটির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের তিন দিন আগেও প্রায় ৯ বার আইটি সিস্টেম ফেল করেছিল। কী ভাবে সবটা শুরু করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কিন্তু আমার কর্মীরা আমাকে প্রচণ্ড সাহায্য করেছিল। ওরা না থাকলে বন্ধন ব্যাঙ্ক আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পারত না। ২০০০ সালে নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত আজ সর্বান্তকরণে সফল।”
এ ছাড়াও চন্দ্রশেখর বলেছেন, “বন্ধন ব্যাঙ্ক সব সময়েই গ্রাহকদের সন্তুষ্টিতে জোর দিয়েছে। তাই আজ আমরা এই জায়গায়। প্রথম দিন ৫০১টি ব্রাঞ্চ এবং সাড়ে চার লাখ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্ট ভাল ভাবে কার্যকরী করে তুলতে আড়াই মাস সময় লেগেছিল। প্রচুর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলাম, সব কিছু সুন্দর ভাবে পরিচালনা করার জন্যে। আজ বন্ধন ব্যাঙ্কে প্রায় সাড়ে তিন কোটি গ্রাহক রয়েছে এবং ৭৭ হাজার কর্মী কর্মরত।”
এই সম্বর্ধনা প্রদানের শেষে ‘এঞ্জেল নেটওয়ার্ক’ লঞ্চের অনুষ্ঠান হয়। এই ‘এঞ্জেল নেটওয়ার্ক’ -এর চিন্তাভাবনার নেপথ্যে রয়েছেন বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির সদস্য অ্যাভেলো রায়। দশজন ‘বেঙ্গল বিজ়নেস এঞ্জেলস’দের মধ্যে ছিলেন ‘লক্ষ্মী টি’-এর রুদ্র চট্টোপাধ্যায়, ‘সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডস’-এর শুভঙ্কর সেন, আইআইএইচএম অ্যান্ড ইন্ডিস্মার্ট গ্রুপ’-এর সুবর্ণ বোস, ‘দ্য জর্জ টেলিগ্রাফ গ্রুপ’-এর সুব্রত দত্ত, ‘চাওম্যান হসপিটালিটি প্রাইভেট লিমিটেড’-এর দেবাদিত্য চৌধুরী, ‘কলকাতা ভেঞ্চার্স’-এর অ্যাভেলো রায়, ‘কুয়াদ্রা মেডিক্যাল সার্ভিসিসেসের’ ডিরেক্টর অংশুমান ঘোষ, ‘টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ’-এর মেঘদূত রায় চৌধুরী, ‘এনকন প্রাইভেট লিমিটেড’-এর অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাঙালি উদ্যোগপতিদের জন্যে এই ‘বেঙ্গল বিজ়নেস এঞ্জেলস’ একটি বৃহত্তর নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম হতে চলেছে। যেখানে গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানে ‘বেঙ্গল বিজ়নেস কাউন্সিল’-এর সদস্যরা একত্রিত হয়ে ব্যবসা সংক্রান্ত গভীর আলোচনা ও পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যবসা ক্ষেত্রে উন্নতির শিখরে পৌঁছবে।
অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার আনন্দবাজার অনলাইন।