গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
জমায়েতে বিপদ। কিন্তু তা বলে সভা বন্ধ থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গে অমিত শাহের ‘ভার্চুয়াল র্যালি’র আয়োজন শুরু করে দিল বিজেপি। আগামী ৯ জুন হবে অমিত শাহের সেই র্যালি। তবে ভাষণ দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গে আসছেন না বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি। কোনও নির্দিষ্ট মাঠে জমায়েতও হচ্ছে না। বরং গোটা পশ্চিমবঙ্গের কয়েক হাজার বিজেপি নেতা-কর্মীকে ভার্চুয়াল মাঠে হাজির করা হচ্ছে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই বহাল রেখেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখতেই এই অভিনব কৌশল, বলছে বিজেপি। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পশ্চিমবঙ্গের জন্যই সর্বাগ্রে সে কৌশল কাজে লাগাচ্ছেন অমিত শাহ।
পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালে যে বিধানসভা নির্বাচন আসছে, তা যে বিজেপির কাছে পাখির চোখ, সে কথা দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব একাধিক বার বলেছেন। দলের প্রাক্তন সভাপতি তথা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তো মাত্র দিন কয়েক আগেও ফের বলেছেন যে, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি। অতএব পশ্চিমবঙ্গের দিকে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের নজরও এখন অনেক বেশি। রাজ্য নেতৃত্বও কাজে লাগাতে চাইছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সেই উৎসাহকে। বঙ্গ বিজেপির সংগঠন যে ৫টি জোনে বিভক্ত, সেই ৫টি জোনেই ভার্চুয়াল র্যালির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই র্যালিগুলিতে সংশ্লিষ্ট জোনের কয়েক হাজার কর্মকর্তাকে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে হাজির করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সর্বাগ্রে রাঢ়বঙ্গ জোনের জন্যই ভার্চুয়াল র্যালির আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার পরে অন্য জোনগুলিতেও একে একে ওই রকমই র্যালি আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু আয়োজনের সে উৎসাহ চতুর্গুণ হয়ে গিয়েছে অমিত শাহের উৎসাহ দেখে। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম ভার্চুয়াল র্যালিটিতে নিজেই ভাষণ দিতে সম্মত হয়েছেন অমিত শাহ। পরেরগুলোয় অমিত শাহ থাকবেন, নাকি জেপি নড্ডা বা অন্য কোনও কেন্দ্রীয় নেতা, এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এই অভিনব কর্মসূচির সূচনাতেই যে রাজ্য বিজেপিতে প্রবল উৎসাহের সঞ্চার করতে চান অমিত, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে রাজ্য বিজেপির অনেকের কাছেই।
আরও পড়ুন: শপথ ভাঙছেন পার্থ, মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করুন: কঠোর বিবৃতি রাজভবনের
প্রথমে স্থির হয়েছিল যে, অমিত শাহের ভাষণের দিনে দলের রাজ্য নেতৃত্ব এবং রাঢ়বঙ্গ জোনের নেতা-কর্মীদের মিলিয়ে মোট ১ হাজার জনকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে অমিত শাহের সঙ্গে। দলের অন্যতম সর্বোচ্চ নেতার ভাষণ শেষ হওয়ার পরে নেতা-কর্মীরা প্রশ্নও করতে পারবেন তাঁকে। কিন্তু অমিত শাহের অভিনব এই কর্মসূচি ঘিরে উৎসাহ এতই বেড়েছে দলে যে, ভার্চুয়াল জমায়েতের আকার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘আমরা ২ হাজার নেতা-কর্মীকে সে দিন অমিত শাহের কর্মসূচির সঙ্গে সরাসরি জুড়ে নেব। রাজ্য স্তরের নেতৃত্ব এবং রাঢ়বঙ্গ জোনের নেতা-কর্মীরা তো সে তালিকায় থাকছেনই, অন্যান্য জোনের অর্থাৎ রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের নেতা-কর্মীদের অনেককেও আমরা এই র্যালিতে শামিল করব।’’
কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রেক্ষিতে দেশে যে লকডাউন জারি করা হয়েছিল, সেই লকডাউন এ বার শিথিল হতে শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বিধি এখনও বহাল থাকছে। এই পরিস্থিতিতে মাঠে-ময়দানে বড় জমায়েত করে হাই-প্রোফাইল নেতাদের র্যালি প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণেই ভার্চুয়াল র্যালির পরিকল্পনা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের জন্যই নিজের প্রথম ভার্চুয়াল র্যালিটি বরাদ্দ করেছেন। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সব জোনের জন্যই আলাদা আলাদা ভার্চুয়াল র্যালি হবে। কিন্তু অমিত শাহ তাঁর প্রথম ভার্চুয়াল র্যালিটা করছেন আমাদের রাজ্যের জন্য। তাই আমরা এই ভার্চুয়াল জমায়েতে গোটা রাজ্যের প্রতিনিধিত্বই রাখতে চাইছি।’’
আরও পড়ুন: কয়েক দিনের মধ্যেই চালু হতে চলেছে পেট্রাপোলে সীমান্ত বাণিজ্য, ইঙ্গিত নবান্নের
মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্তও রাজ্য বিজেপি ১ হাজার জনকে নিয়ে ভার্চুয়াল র্যালি আয়োজন করার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতেই পরিকল্পনা বদলে গিয়েছে। অমিত শাহের অভিনব র্যালি ঘিরে উৎসাহ এতটাই বেড়েছে দলের অন্দরে যে, সব ক’টি জোনের অংশগ্রহণেরই ব্যবস্থা করতে হচ্ছে নেতৃত্বকে। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু জানিয়েছেন, রাজ্য নেতৃত্ব এবং রাঢ়বঙ্গ জোনের নেতৃত্বের সকলেই ভার্চুয়াল র্যালিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। রাঢ়বঙ্গ জোন থেকে নীচের স্তরের অনেক নেতা-কর্মীও সুযোগ পাবেন। তবে বাকি ৪টি জোনে যত জন জেলা সভাপতি ও মণ্ডল সভাপতি থাকছেন, তাঁদেরও জুড়ে নেওয়া হবে ভার্চুয়াল র্যালির সফটওয়্যারে।
সদ্য রাজ্য বিজেপির নতুন কমিটি ঘোষিত হয়েছে। নতুন পদাধিকারীদের অনেকেই মঙ্গলবার থেকে রাজ্য দফতরে হাজির হয়ে কাজকর্ম বুঝে নিতে শুরু করেছেন। এবং শুরুতেই ব্যস্ততা তুঙ্গে পৌঁছেছে নতুন কমিটির জন্য। ৯ জুনের র্যালির প্রস্তুতি জোরকদমে শুরু করে দিতে হয়েছে। হাজার দুয়েক নেতা-কর্মীকে সফটওয়্যারে জুড়ে নিয়ে ভাষণ দেবেন অমিত শাহ। আয়োজনটা খুব সহজ-সরল নয়। ওই সফটওয়্যার কী ভাবে কাজ করবে, কী ভাবে ওই র্যালির সঙ্গে জুড়তে হবে, ভার্চুয়াল জমায়েতে কী ভাবে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে, সে সব ছকে নিতে হচ্ছে আগে থেকেই। অনেকেই নেট দুনিয়ার এই সব নতুন কৌশলের সঙ্গে খুব একটা সড়গড় নন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাঁদের সব শিখিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হচ্ছে।
রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, ৯ তারিখের আগেও জমায়েতের মহড়া দেওয়া হবে। অর্থাৎ রাজ্য নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে গোটা রাজ্যের বিজেপি নেতা-কর্মীদের নিয়ে আগেই একবার ভার্চুয়াল জমায়েত করে নেওয়া হবে। গোটা ব্যবস্থায় কোথাও কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে কি না, সেখান থেকেই বুঝে নেওয়ার চেষ্টা হবে। তবে যাঁরা সফটওয়্যারের মাধ্যমে সে দিন জুড়তে পারবেন না অমিত শাহের সঙ্গে, তাঁরা ভাষণ শুনতে পাবেন না, এমন নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় অমিত শাহের ভাষণ সে দিন লাইভ সম্প্রচার করার ব্যবস্থাও বিজেপি রাখছে।